ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদের (৩৭) স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়াসহ তিনজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অপর দুই আসামি হলেন—রাহুল দাউদের শ্যালক (সামিয়ার ভাই) ওয়াহিদ আহমেদ এবং তার বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দুই দফায় মোট ৯ দিনের রিমান্ড শেষে পুলিশ তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে।
আদালতে হাজির করার পর তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মতি জানান। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনায়েদের আদালতে আসামি সামিয়া ও ওয়াহিদের এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দীনের আদালতে আসামি মারিয়া আক্তার লিমার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তিনজনকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) পল্টন থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রোকনুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জবানবন্দি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় রেকর্ড করে আসামিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ২০ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদ তাদের দ্বিতীয় দফায় আরও চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডে শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন শরীফ ওসমান বিন হাদি মতিঝিল মসজিদে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা কার্যক্রম শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। বক্স কালভার্ট রোড দিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে মোটরসাইকেলে থাকা আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদ ও তার সহযোগীরা তাকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে চলন্ত অবস্থায় হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।
গুলিবিদ্ধ শরীফ ওসমান বিন হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সযোগে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।































