বর্ষা–মাহির সম্পর্কের জেরে বলি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ

Published : ১১:৪৭, ২০ অক্টোবর ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। পুলিশি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা জানিয়েছেন, প্রেমঘটিত বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
বর্ষা ও তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানের সম্পর্ক ভাঙনের পরই ক্ষোভ থেকে জুবায়েদকে হত্যা করে মাহির ও তার এক বন্ধু। তবে জুবায়েদ হত্যার বিষয়ে ছাত্রী বর্ষা নিজে কিছু জানতেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “বর্ষা ও মাহিরের মধ্যে প্রায় নয় বছরের সম্পর্ক ছিল। মাহির বুরহানউদ্দিন কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র এবং বর্ষা পড়তেন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে। দুজনের বেড়ে ওঠা একই এলাকায়, ছোটবেলা থেকেই তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল।”
ওসি আরও জানান, সম্প্রতি তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। কয়েকদিন আগে বর্ষা মাহিরকে জানায়, সে এখন জুবায়েদকে পছন্দ করে। তবে বর্ষার সঙ্গে জুবায়েদের কোনো সরাসরি প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, এমনকি কোনো বার্তা আদানপ্রদানও পাওয়া যায়নি। শুধু বর্ষার ওই কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে মাহির তার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে জুবায়েদকে খুন করে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বর্ষার সঙ্গে জুবায়েদের বন্ধু সৈকতের পরিচয় হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে অন্য কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। জুবায়েদের মৃত্যুর পর বর্ষা সৈকতকে মেসেজ দিয়ে ঘটনাটি জানায়।
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় বর্ষাকে বেশ স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে। তার মধ্যে কোনো ধরনের ভয়, কান্না বা হতাশার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুরো সময়ই তাকে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনার পেছনে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য তদন্ত অব্যাহত আছে, পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”
উল্লেখ্য, নিহত জুবায়েদ হোসাইন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলা নামের বাড়িতে ওই ছাত্রী বর্ষাকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন।
রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বর্ষার বাসার তৃতীয় তলায় তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাসার নিচ তলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়িজুড়ে রক্তের দাগ দেখা যায়, আর তিনতলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন জুবায়েদ।
ঘটনার পর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন এবং তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনম বর্ষাকে হেফাজতে নেয়। এর আগে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিডি/এএন