আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন দলের দ্বিতীয় প্রজন্মের বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা—যাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, আবার কেউ কেউ সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন। তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব। উল্লেখ্য, সালাউদ্দিন আহমেদ ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে আন্দোলনের সময় আলোচনায় এসেছিলেন।
ঢাকা-৬ আসনে দলটি মনোনয়ন দিয়েছে অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে। ইশরাক ২০২০ সালের ঢাকার দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল সেই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করলেও শপথগ্রহণ না হওয়ায় তিনি দায়িত্ব নিতে পারেননি।
ফরিদপুর-২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যিনি সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এদিকে, ফরিদপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ত্রাণমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তার পরিবার উপমহাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
পঞ্চগড়-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে নওশাদ জমির, যিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক।
নাটোর-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুল। তিনি পেশায় আইনজীবী এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
কুষ্টিয়া-২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে রাগীব রউফ চৌধুরী, যিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্যানেল আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন।
যশোর-৩ আসনে বিএনপি টিকিট পেয়েছেন প্রয়াত মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন।
মৌলভীবাজার-৩ আসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান আবারও ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারীকে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ এ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৪ এ সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।
গাজীপুর-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন আ স ম হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ, আর গাজীপুর-২ এ মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনি।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মঈনুল ইসলাম খান, যিনি ২০০৬ সালের উপনির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন।
পিরোজপুর-২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহমেদ সোহেল মঞ্জু সুমন।
ময়মনসিংহ-৯ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি আনওয়ারুল হোসেন খানের ছেলে ইয়াসের খান চৌধুরী।
শেরপুরেও দেখা গেছে প্রার্থীদের মধ্যে পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। শেরপুর-১ আসনে হযরত আলীর মেয়ে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা, শেরপুর-২ এ প্রয়াত জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরী এবং শেরপুর-৩ এ সাবেক এমপি সিরাজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হক রুবেল প্রার্থী হয়েছেন।
ঝিনাইদহ-৩ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান।
সর্বমোট তালিকায় দেখা গেছে, বিএনপি এবারও পারিবারিক রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের এই নেতারা দলের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

				
						
											
											
											
											




























