হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কাটিহারা গ্রামের শিশু ফারহানকে অবশেষে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে অপহরণকারী চক্র—আর এর পেছনে কাজ করেছে এক মায়ের হৃদয়বিদারক কান্নার ভিডিও।
শিশুটির বড় বোন রেখা বেগম জানিয়েছেন, মায়ের সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই চক্রটি ফারহানকে ছেড়ে দেয়।
মাত্র ১২ বছরের ফারহান কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে বড়বোনের বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করছিল। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে মা রাহেলা বেগম তাকে নৌকায় তুলে দেন মাদরাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে, কিন্তু সেদিনের পর আর ফিরে আসেনি ফারহান। দিন গড়ায়, সপ্তাহ কেটে যায়—দুই মাস ধরে ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে নিখোঁজ সন্তানের সন্ধানে পাগলের মতো দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান রাহেলা বেগম।
গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর নিকেতন পার্কে ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কাঁদছিলেন তিনি। সেই সময় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মাহসান স্বপ্ন এগিয়ে এসে ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, রাহেলা বেগম হাউমাউ করে কাঁদছেন, বারবার বলছেন—‘আমার ছেলেকে ফেরত দিক, প্রয়োজনে আমি আমার কিডনি বিক্রি করে দেব।’ মুহূর্তেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে।
এরপর অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। ফারহানের বোন রেখা বেগম জানান, ভিডিওটি দেখেই চমকে যায় অপহরণকারী চক্র। তারা ফারহানকে ভিডিওটি দেখায়। নিজের মায়ের কান্না দেখে ছোট্ট ছেলেটি নিজেও কেঁদে ওঠে। সেই আবেগের মুহূর্তেই চক্রটি সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে ছেড়ে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফারহানকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ব্রিজের কাছে ফেলে যায় তারা।
রেখা বেগম বলেন, “ফারহান দুই মাসেরও বেশি সময় এক টিনের ঘরে বন্দি ছিল। জায়গাটি সে চিনতে পারেনি, তবে আরও কিছু শিশু সেখানে ছিল।” উদ্ধার হওয়ার সময় ফারহান অসুস্থ অবস্থায় ছিল—তার দুই সামনের দাঁত ভাঙা, হাত-পায়ের নখ ক্ষতিগ্রস্ত। বর্তমানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার পর কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মাহসান স্বপ্ন বলেন, “আমি এর আগে অনেক মানবিক গল্প করেছি। কিন্তু এই ঘটনাটা ছিল ব্যতিক্রম। সেই ভিডিও ভাইরাল না হলে হয়তো বাচ্চাটিকে ফেরত পাওয়া যেত না। এখন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আমাকে ফোন করে—তাদের সন্তান বা স্বজন নিখোঁজ, সাহায্য চান। এটা সত্যিই চিন্তার বিষয়।”
এক মায়ের অশ্রু আর ভালোবাসাই ফিরিয়ে দিয়েছে ছেলেকে—এই ঘটনাটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

				
						
											
											
											
											





























