রাজধানীর জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে উদ্ধার হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেত্রী জান্নাত আরা রুমির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর সরকারি কবরস্থানের সামনে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় স্বজন ও স্থানীয়রা অংশ নেন।
জান্নাত আরা রুমি এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের (ধানমন্ডি থানা) সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, জিগাতলা পুরান কাঁচা বাজারের পাশের একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে রুমির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এটি আত্মহত্যা না কি হত্যাকাণ্ড—সে বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন ধানমন্ডি এলাকায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে মারধরের একটি ঘটনার পর রুমির নাম আলোচনায় আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে ওই নারী স্লোগান দিলে তাকে মারধর করা হয় এবং পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর থেকেই জান্নাত আরা রুমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও চাপের মুখে ছিলেন বলে দাবি করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনার পর রুমি নিয়মিতভাবে ধমকি ও নেতিবাচক প্রচারণার শিকার হচ্ছিলেন।
নিহত জান্নাত আরা রুমির বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার নাজিরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তার বাবা মো. জাকির হোসেন এবং মা নুরজাহান বেগম।
রুমির সাবেক স্বামী মো. বিপ্লব সরকার জানান, তাদের মধ্যে চার থেকে পাঁচ মাস আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি বলেন, এর আগেও রুমির একটি বিয়ে হয়েছিল এবং সেখানেও ডিভোর্স হয়েছিল। প্রথম স্বামীর ঘরে রুমির আট বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে, যার নাম মুনতাহা। আর তার সঙ্গে সংসারে সাড়ে তিন বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে, নাম আয়মান।
বিপ্লব সরকার আরও বলেন, বিয়ের পর তারা নওগাঁর নজিপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন। একপর্যায়ে রুমি তাকে জানিয়ে দেন যে, তার আর প্রয়োজন নেই এবং ঘর ছেড়ে যেতে বলেন। এরপর গত তিন থেকে চার মাস ধরে তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তিনি জানান, জান্নাত আরা রুমি আগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং সেখান থেকেই ধীরে ধীরে এনসিপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ ফোন করে তাকে রুমির মৃত্যুর খবর জানায় বলে দাবি করেন সাবেক স্বামী বিপ্লব সরকার। ঘটনায় শোক ও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যা তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
































