নেপালে ক্ষমতাচ্যুত অলি আবার নির্বাচিত

নেপালে ক্ষমতাচ্যুত অলি আবার নির্বাচিত ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৬:৫৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

জেন–জি নেতৃত্বাধীন গণ–আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানো নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নিজ দলের ভোটাভুটিতে আবারও দলীয় প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দলের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি–ইউনিফায়েড মার্কসিস্ট–লেনিনিস্ট (সিপিএন–ইউএমএল)-এর শীর্ষ নেতৃত্বে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। এর মধ্য দিয়ে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার দায়িত্ব আবারও তার কাঁধে গেল।

রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত দলের দুই দিনের সাধারণ সম্মেলনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রধান নির্বাচন করা হয়। এতে বিপুল ব্যবধানে জয় পান ৭৩ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিক। দলের অভ্যন্তরীণ ভোটাভুটিতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈশ্বর পোখরেলকে প্রায় তিন গুণ ভোটে পরাজিত করেন অলি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে জেন–জি আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশজুড়ে গণ–অভ্যুত্থান শুরু হলে অলির সরকারের পতন ঘটে। তীব্র আন্দোলনের মুখে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। সেই ঘটনার পরই এবার আবারও দলীয় প্রধান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেন তিনি।

আগামী বছরের মার্চে নেপালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনকালীন সময় পর্যন্ত দেশটির দায়িত্বে রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কির নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

দলের প্রচার বিভাগের প্রধান রাজেন্দ্র গৌতম জানান, নির্বাচনে অলি পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬৩ ভোট, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঈশ্বর পোখরেল পেয়েছেন ৫৬৪ ভোট। ফলাফলে স্পষ্ট ব্যবধানে জয়ী হন অলি।

দলের ভেতরে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে অলি দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিভিন্ন সমাবেশে তাকে ঘিরে সমর্থকদের আবেগঘন উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক জায়গায় ‘কেপি বা (বাবা), আমরা তোমাকে ভালোবাসি’ লেখা পোস্টার ও ব্যানারও দেখা গেছে।

সম্মেলনে অংশ নেওয়া পশ্চিম নেপালের গণ্ডকি প্রদেশের প্রতিনিধি তারা মায়া থাপা মাগার বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় জাতির জন্য অলির মতো অভিজ্ঞ নেতৃত্বই প্রয়োজন। রাজেন্দ্র গৌতমও জানান, অলির বিজয়ে তিনি সন্তুষ্ট।

এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে নেপাল। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা অলির সরকারি বাসভবন, সংসদ ভবন ও আদালতসহ শত শত স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনার কিছুদিন পরই চারবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অলি পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগপত্রে অলি উল্লেখ করেন, তার সরে দাঁড়ানো রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করবে বলে তিনি আশা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলনে অন্তত ৭৭ জন নিহত হন। দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগে জমে থাকা ক্ষোভ তখন বিস্ফোরিত হয়।

বিক্ষোভের সময় প্রাণঘাতী দমন–পীড়নে অলির ভূমিকা তদন্তে একটি সরকারি কমিশন কাজ করছে। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার অলিসহ কয়েকজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

অলির পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কি। তিনি আগামী ৫ মার্চের নির্বাচন পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়মুক্ত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

সব মিলিয়ে নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের গভীর অনাস্থা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement