‘ই-কমার্স ইকোনমি’কী

Published : ২৩:৫৯, ৬ মে ২০২৫
ই-কমার্স ইকোনমি বলতে বোঝায় এমন একটি ডিজিটাল অর্থনীতি, যা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা, ডিজিটাল পেমেন্ট, ডেলিভারি সেবা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে একত্রে সংযুক্ত করে।
এটি কেবলমাত্র কেনাবেচার একটি মাধ্যম নয়—বরং এটি একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রাজস্ব বাড়ায়, রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি করে, এবং অর্থনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলে।
বাংলাদেশে ই-কমার্স ইকোনমি গড়ে উঠলে—
মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা জিডিপিতে অবদান রাখতে পারবে
নারী উদ্যোক্তার হার বাড়বে
প্রযুক্তিনির্ভর রাজস্ব আসবে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রবেশাধিকার সহজ হবে
অতএব, ই-কমার্সকে শুধু সেক্টর নয়, ‘নতুন অর্থনীতির রূপকার’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
১. বাংলাদেশে ই-কমার্স GDP-তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না কেন?
বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত এখনও জিডিপি’র আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না, তার প্রধান কারণগুলো হলো:
১. বহু ব্যবসা এখনো ইনফর্মাল—Facebook based ফরম্যাটে চলছে, যেখানে ট্রেড লাইসেন্স, BIN, VAT নেই
২. লেনদেন মূলত ক্যাশ-অন-ডেলিভারি ভিত্তিক—ব্যাংকিং বা ডিজিটাল ট্র্যাক রেকর্ডে ঢুকে না
৩. সঠিক ব্যবসা ডেটার ঘাটতি—সরকার, e-CAB বা BBS-এর কাছে কোনো কেন্দ্রীয় ডেটাবেইস নেই
৪. নীতিগত স্পষ্টতা ও প্রণোদনার অভাব—ফলস্বরূপ উদ্যোক্তারা ফর্মালাইজ হতে আগ্রহ পান না
এই বাস্তবতা পাল্টাতে হলে—
Smart BDID চালু করা
ডিজিটাল পেমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রণোদনা বাড়ানো
e-CAB এর মাধ্যমে একটি জাতীয় e-commerce ডেটা ড্যাশবোর্ড গঠন করতে হবে
৪. BDID তো অলরেডি আছে। Smart BDID কেন প্রয়োজন?
Smart BDID (Business Digital Identity) একটি ইউনিক ডিজিটাল ব্যবসা পরিচিতি, যা একজন উদ্যোক্তার যাবতীয় তথ্য একক আইডিতে যুক্ত করবে। এর প্রয়োজনীয়তা:
একজন উদ্যোক্তা এখন ট্রেড লাইসেন্স, TIN, BIN, পেমেন্ট, কুরিয়ার, মার্কেটপ্লেস—সবখানেই আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশন করতে বাধ্য হন
ফলে সময়, খরচ ও জটিলতা বাড়ে
পাশাপাশি সরকার কোনো নির্ভরযোগ্য ও একীভূত তথ্য পায় না
Smart BDID চালু হলে—
ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন সহজ ও স্বয়ংক্রিয় হবে
উদ্যোক্তা সহজেই e-CAB, ব্যাংক ও সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাবে
রেজিস্টার্ড উদ্যোক্তারা প্রণোদনা, ট্রেনিং, লোন ও ভ্যাট ইনসেনটিভ পাবে
সরকার ও নীতিনির্ধারকরা ডেটা-চালিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে
সংক্ষেপে, এটি হবে ‘এক ব্যবসা, এক আইডি’ নীতির বাস্তবায়ন।
৫. ‘গ্লোবাল বাংলাদেশ’ বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
‘গ্লোবাল বাংলাদেশ’ একটি দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছায়, এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
ই-কমার্স হলো এই ভিশন বাস্তবায়নের সবচেয়ে সহজ ও সম্ভাবনাময় পথ।
কারণ—
Shopify, Amazon, Etsy, eBay-এর মতো প্ল্যাটফর্মে দেশের পণ্য বিক্রি করা যায়
JAMdani, হস্তশিল্প, স্কিন কেয়ার, ফুড, হালাল কসমেটিকস ইত্যাদি বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় হতে পারে
ডিজিটাল মার্কেটিং ও লজিস্টিক্স ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো গেলে বিশাল রপ্তানি বাজার গড়ে ওঠা সম্ভব
গ্লোবাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের দরকার:
Cross-border e-commerce পলিসি
International storefront তৈরি
পেমেন্ট সিকিউরিটি ও শিপিং লজিস্টিক্স উন্নয়ন
৬. আপনি কেন বলছেন যে 'ই-কমার্স ইকোনমি' একটি আন্দোলন হতে পারে?
কারণ ই-কমার্স ইকোনমি কেবলমাত্র একটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম নয়, এটি একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক রূপান্তর আন্দোলন।
এই খাতে নারীরা ঘরে বসে আয় করছেন, তরুণরা চাকরির পরিবর্তে ব্যবসায় নামছেন, গ্রামীণ উদ্যোক্তা শহরের ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাচ্ছেন—এগুলো এককভাবে কোনো অন্য খাতে দেখা যায় না।
একটি ব্যবসা যদি—
রপ্তানির পথ খুলে দেয়,
আয়-বৈষম্য কমায়,
দক্ষতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ায়,
নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে,
এবং একই সঙ্গে আস্থার সংকট ভেঙে ফেলে—
তাহলে সেটি কেবল অর্থনীতি নয়, একটি জনআন্দোলনের অবয়ব পায়।
আমি এই বিশ্বাস থেকেই ‘ই-কমার্স ইকোনমি’কে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এক আন্দোলনের রূপ দিতে চাই।
৭. তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনার পরিকল্পনা কী?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তরুণ জনগোষ্ঠী।
তাদের সম্ভাবনাকে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত করতে হলে চাই ব্যবহারিক শিক্ষা ও বাস্তব সহযোগিতা।
আমার পরিকল্পনা:
১. Skill-to-Seller Program – ফ্রিল্যান্সার, ডিজাইনার, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা
২. Digital Founders Hub – স্টোর সেটআপ, পণ্য সোর্সিং, কনটেন্ট, ফটোগ্রাফি, মার্কেটিং—সব এক জায়গায় শেখার ব্যবস্থা
৩. Startup Launchpad – তরুণদের জন্য মাসিক ইনকিউবেশন ওয়ার্কশপ, যেখানে সেরা আইডিয়াগুলো পাবে ইনভেস্টমেন্ট গাইডেন্স
৪. Campus to Commerce – বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ই-কমার্স ক্লাব’ গঠন ও প্রতিযোগিতা আয়োজন
আমার স্বপ্ন—তরুণদের হাত ধরে দেশ হবে ই-কমার্স ইকোনমি।
৯. নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কী করবেন?
নারীরা হচ্ছেন ঘরে বসে ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল করার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অংশীদার।
তাদের জন্য আমার প্রস্তাব:
১. Home-based Business Recognition Policy
২. ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই Smart BDID-র মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সুবিধা
৩. নারীবান্ধব কুরিয়ার সেবা ও রিটার্ন সুবিধা
৪. নারী উদ্যোক্তা বিশেষ ব্যাজ ও প্রচারণা ক্যাম্পেইন
৫. নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফান্ড ও Soft Skill Training
আমার লক্ষ্য, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহজ, নিরাপদ ও সম্মানজনক ই-কমার্স ইকোসিস্টেম তৈরি করা।
১০. গ্রাহকের আস্থা (Trust) ফেরাতে আপনার রোডম্যাপ কী?
গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন ই-কমার্স খাতের সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ।
আমার রোডম্যাপ:
১. Verified Seller Accreditation System
২. ডিজিটাল ডিসপিউট রেজোলিউশন বোর্ড (DRB) – যেখানে নিরপেক্ষ তদন্তে দ্রুত সমাধান
৩. গ্রাহকের অভিযোগের সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে সমাধান নীতিমালা
৪. Smart Review & Rating System – যেখানে রিভিউ হবে যাচাইযোগ্য ও নিরপেক্ষ
৫. Trust Score Index – প্রত্যেক বিক্রেতার উপর ট্রাস্ট মেট্রিক্স প্রকাশ
এই পদক্ষেপগুলো থাকলে গ্রাহকের আস্থা ফেরানো সম্ভব, এবং ই-কমার্স হবে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প।
১১. নির্বাচিত হলে আপনার প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কী হবে?
১. Smart BDID পাইলট চালু ও রেজিস্ট্রেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত
২. Trust & Compliance Cell গঠন – গ্রাহক ট্রাস্ট ও ট্রানজেকশন মনিটরিং সেল
৩. e-CAB Dashboard তৈরি – সদস্য ডেটা, সমস্যার ধরণ ও সমাধান অগ্রগতি ট্র্যাকিং
৪. সদস্যদের জন্য Helpline ও Monthly Townhall Meeting চালু
৫. নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা সাপোর্ট ইউনিট
৬. Cross-border E-commerce কর্মশালা ও রপ্তানি প্ল্যান ঘোষণা
৭. ট্রেনিং ক্যালেন্ডার ও Knowledge Portal চালু
এই ১০০ দিন হবে একটি বাস্তবায়ন অভিযানের সূচনা।
১২. আপনি কি কেবল বড় উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন?
না। আমার দৃঢ় অবস্থান হলো—ই-কমার্সের প্রকৃত প্রাণ হচ্ছে ক্ষুদ্র, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তারা। তবে, বড় উদ্যোক্তাদের ই-ক্যাবে সংশ্লিষ্ট করতে কাজ করবো।
যারা ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে, নিজের ওয়েবসাইটে বা লোকাল মার্কেটপ্লেসে ব্যবসা করছেন—তাদের কথা আগে বলা দরকার।
আমার পরিকল্পনায় আছে:
Home-based seller এর জন্য সহজ রেজিস্ট্রেশন
ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য Training & Transition Program
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য Micro-Loan Linkage
নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা Helpline ও Monthly Support Desk
Local Seller Support Task Force গঠন
সবাইকে নিয়েই হবে e-CAB—এটাই আমার প্রতিশ্রুতি।
১২. ই-কমার্সে পেমেন্ট সিকিউরিটির বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
পেমেন্ট সিকিউরিটি নিয়ে সমস্যা এখন আস্থা সংকটের মূল কারণ।
আমার অবস্থান ও পদক্ষেপ:
১. Escrow System চালু করা – যেখানে টাকা নিরাপদ থাকবে ডেলিভারি পর্যন্ত
২. Dispute Resolution Framework – বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের জন্য নিরপেক্ষ সমাধান
৩. রিফান্ড টাইমলাইন বাধ্যতামূলক – সর্বোচ্চ ৫ কার্যদিবসের মধ্যে
৪. পেমেন্ট গেটওয়ে মনিটরিং সেল – যারা অনিয়ম নিরীক্ষা করবে
৫. Customer Awareness Campaign – পেমেন্ট ব্যবস্থার উপর আস্থা বাড়াতে
আমি চাই—পেমেন্ট হোক নির্ভরতার প্রতীক। ই-কম…
এনই