ডিম ও মুরগির দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে খামারিরা

ডিম ও মুরগির দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে খামারিরা

The Business Daily

Published : ১৫:১৪, ৭ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে প্রতিদিন ব্রয়লার, সোনালি ও লেয়ার মুরগির মোট উৎপাদন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন এবং ডিমের উৎপাদন ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি পিস। এর মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন মুরগি ও ৩ কোটি পিস ডিম উৎপাদন করেন। প্রতি কেজি মুরগিতে গড়ে ৩০ টাকা লোকসান ধরলে প্রতিদিন তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ কোটি টাকা। আর ডিমে গড়ে ২ টাকা লোকসান ধরে প্রতিদিনের ক্ষতি ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিম ও মুরগি মিলিয়ে প্রতিদিন প্রান্তিক খামারিদের লোকসান হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। গত ৫ থেকে ৬ মাসে এই ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়।
 
এই বিপুল লোকসানের মূল কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কিছু অসাধু চক্র ও কোম্পানির কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ব্যবস্থা। কোম্পানির উৎপাদন খরচ প্রান্তিক খামারিদের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় বাজারে দাম কমে যাচ্ছে। ফলে খামারিরা কম দামে বিক্রি করলেও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এই বৈষম্য ধ্বংস করছে প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব।
  
সংকট মোকাবেলা ডিম মুরগির ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের উৎপাদনে ধরে রাখতে ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়ে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বিপিএ। দাবিগুলো হলো-
 
১) জাতীয় পোলট্রি শুমারি ও ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি।
 
২) সব ডিলার, খামারি ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোক্তা আইডি কার্ড প্রদান।
 
৩) নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ ও সরকারি নীতিনির্ধারণী মিটিংয়ে প্রান্তিক খামারিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
 
৪)  প্রান্তিক খামারিদের জন্য সরকারি নীতিগত সহায়তা ও জামানতবিহীন স্বল্পসুদের ঋণ ব্যবস্থা।
 
৫) ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দামে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারিভাবে ফিডমিল ও হ্যাচারি স্থাপন।
 
৬) আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও ল্যাব সুবিধা সম্প্রসারণ এবং জেলা-উপজেলায় কোল্ড স্টোরের ব্যবস্থা।
  
৭) স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য ও বাজার সংযোগ নিশ্চিত করা এবং ড্রেসড মার্কেটে প্রবেশাধিকার।
 
৮) নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের মাধ্যমে বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।
 
৯) বাজার ধসসহ সংকটকালীন সময়ে প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রণোদনা ও ভর্তুকির ব্যবস্থা।
 
১০) সুষ্ঠু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নীতিমালা প্রণয়ন এবং জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন।

বিপিএ জানায়, প্রতিদিন শত শত খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত ছয় মাসেই অন্তত ১০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। একটি খামার বন্ধ মানে শুধু ডিম বা মুরগির উৎপাদন কমা নয়, বরং একটি পরিবার আয়ের উৎস হারাচ্ছে, একজন যুবক বেকার হয়ে যাচ্ছে, একটি সংসার ঋণের বোঝায় ডুবে যাচ্ছে। অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে গেছেন।

বিডি/এ

শেয়ার করুনঃ
Advertisement