“রাজনীতি পুরুষের একার কাজ নয়”—প্রার্থী বৈশাখীর বার্তা

“রাজনীতি পুরুষের একার কাজ নয়”—প্রার্থী বৈশাখীর বার্তা তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। ছবি : কালবেলা

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২২:৩৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুপুরের ঝলমলে রোদে লিফলেট হাতে ছুটে চলেছেন বৈশাখী। গায়ের ওড়না দিয়ে বারবার কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছেন, তবুও ক্লান্তির কোনো ছাপ নেই। ক্লাস শেষে হলের পথে ফেরা শিক্ষার্থীদের হাতে তিনি তুলে দিচ্ছেন নিজের নির্বাচনী লিফলেট। ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পাওয়া এই প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয় কালবেলা প্রতিনিধির।

আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মোট ৮টি প্যানেল। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এসব প্যানেল থেকে শীর্ষ দুই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। শত শত নেতাকর্মীর ভিড় থেকে শীর্ষ পদে নিজের মনোনয়ন পাওয়াকে তিনি দেখছেন নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে।

নারায়ণগঞ্জ শহরে বেড়ে ওঠা বৈশাখী পড়াশোনা করেছেন ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি শেষে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। পারিবারিকভাবে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার। বরং নারীর অধিকার নিয়েই কাজ করতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন পড়াশোনা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবেন।

কিন্তু জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যখন সহপাঠীদের রক্ত ঝরতে দেখলেন, তখন আর চুপ করে থাকা সম্ভব হয়নি। রাজপথে নেমে আসেন অন্যদের সঙ্গে। আন্দোলনকারীদের জন্য কাঁধে লোহার রড বহন করার তার একটি ছবি সেই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

বৈশাখী বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্টের পর আবার পড়াশোনায় মন দিই। কিন্তু আন্দোলনে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকার পরও আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে, যা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হব। ছাত্রদলকে আমার কাছে ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছেলেদের সমান   বরং কখনও বেশি   সম্মান ও নিরাপত্তা পেয়েছি। সবসময় মনে হয়েছে, আমি আমার পরিবারের মাঝেই আছি।’

শীর্ষ পদে মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে বিশেষ কোনো ঘটনা মনে করি না, বরং এমনটাই হওয়া উচিত। রাজনীতি পুরুষদের একার কাজ নয়। সবাইকে যোগ্যতার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করতে হবে, লিঙ্গ দিয়ে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে সমানসংখ্যক নারী ভর্তি হচ্ছে, সেখানে একজন নারী প্রার্থী থাকাটা ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। বরং দুঃখজনক হলো, অন্য সংগঠনগুলো তাদের যোগ্য নারী সদস্যদের মূল্যায়ন করতে পারেনি।’

নির্বাচনে জয় সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী বৈশাখী বলেন, ‘দীর্ঘদিন নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি তাদের সমস্যাগুলো সহজেই বুঝতে পারি। প্রতিদিনের জীবন থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার সাইবার বুলিং, স্লাটশেমিং—সব জায়গায় নারীরা যখন আমাকে তাদের হয়ে কিছু করার আহ্বান জানায়, তখন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আশার কথা হলো, ছেলেদের কাছ থেকেও অভূতপূর্ব সমর্থন পাচ্ছি। শুধু আমি নই, এবারের জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল তার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সাফল্য পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

Source: Kalbela

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement