চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মামুন মিয়া স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়ার পর তার উপর জটিল শল্যচিকিৎসা (অপারেশন) সম্পন্ন করা হয়েছে। অপারেশনের সময় তার মাথা থেকে মোট ১৩টি হাড় বের করা হয়, যা আপাতত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এজন্য তার মাথার ব্যান্ডেজে লেখা রয়েছে ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না।’
টানা চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মামুনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। বর্তমানে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং তিনি পার্কভিউ হাসপাতালে কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন।
তিনি জানান, মামুনের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো, এবং তার জ্ঞান ফিরতে শুরু করেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বা পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তার খুলি পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
ঘটনার সময় মামুনের মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত হয়েছিল। এর ফলে ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কানের পর্দা ছিঁড়ে যায়।
একই সংঘর্ষে আহত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তার জ্ঞান একসময় মাত্র ৩-এ নেমে গিয়েছিল, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ১৫ হওয়ার কথা। বর্তমানে মেডিক্যাল বোর্ড তার জন্য নতুন অপারেশনের বিষয়ে আলোচনা করছে।
অন্যদিকে, ইসলামের স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামের ডান হাতের রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মামুনের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, গত ৩১ আগস্ট সংঘর্ষের সময় ধারালো রামদা ও চাপাতি দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “মানুষ হয়েও কেউ কিভাবে আরেকজন মানুষের সঙ্গে এমন নৃশংস আচরণ করতে পারে?”
চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, মামুনের অপারেশন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে সুস্থ হলে দুই মাস পর তার খুলি পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
ফেসবুকে মামুনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান লিখেছেন, “যে মস্তিষ্কে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হওয়ার বুনন ছিল, আজ সেই মস্তিষ্ক হাড়শূন্য। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে রক্ষা করতে পারেনি, রাষ্ট্রও তার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিয়ান খান রাকিব মন্তব্য করেছেন, “‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’ এই বাক্যটা আমাদের সমাজের ভয়াবহতার প্রতীক। যারা এমনভাবে শিক্ষার্থীদের কুপিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।”
ঘটনার পেছনের সূত্রপাত ঘটে গত ৩০ আগস্ট রাতে, যখন এক ছাত্রীর বাসার গেট খোলাকে কেন্দ্র করে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় এই সংঘর্ষে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য আহত হন।