মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভে চাপে ইসরায়েল, টিকবে তো আব্রাহাম চুক্তি?

মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভে চাপে ইসরায়েল, টিকবে তো আব্রাহাম চুক্তি? ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৬:৪৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ফের একবার বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছেন “এখন সময় এসেছে দখলের।” গাজাকে তিনি সরাসরি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যায়িত করে দাবি করেন, দেশ ভাগ করে মাঝখানে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র দাঁড় করানোর চিন্তা একেবারেই বাদ দিতে হবে। তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকেও নানা দেশের সমালোচনার মুখে ফেলেছে।

এর আগে গত মাসে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে লাখো মানুষ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন। একই সময়ে গাজার উদ্দেশে মানবিক সহায়তা নিয়ে স্পেন থেকে পাঠানো হয় শতাধিক জাহাজের বহর। এমন প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই উস্কানিমূলক কথাবার্তার পর সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শক্তি সংযুক্ত আরব আমিরাত।

আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পশ্চিম তীর দখল করা তাদের কাছে ‘রেড লাইন’। তার মতে, আব্রাহাম চুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করার একটি প্রতিশ্রুতি। তাই পশ্চিম তীর দখলের যে কোনো পদক্ষেপ মানে হবে সেই চুক্তির মূল চেতনার বিনাশ। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমেই ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল। তখন শর্ত ছিল ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে।

কিন্তু ইসরায়েলের বহু দিনের স্বপ্নই ফিলিস্তিন ভূখণ্ড পুরোপুরি নিজেদের দখলে আনা। স্মোট্রিচ যে নতুন মানচিত্র উপস্থাপন করেছেন, তাতে দেখা যায় পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মাত্র ১৮ শতাংশ জমিতে সীমাবদ্ধ থাকবে ছয়টি ফিলিস্তিনি শহর জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরন। ফলে বেথলেহেমসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনি অঞ্চল বাদ পড়বে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার আশা একেবারেই ভেস্তে যাবে।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি অবৈধ বসতি গড়ে তুলেছে, যেখানে এখন সাত লাখেরও বেশি ইহুদি বসবাস করছে। একই এলাকায় বসবাস করছে প্রায় ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ হলেও ইসরায়েল তা স্বীকার করে না। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সরকার নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে, যা কার্যকর হলে পুরো পশ্চিম তীর ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

নেতানিয়াহুর সরকারে অনেক মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন দখলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। তবে আমিরাতের স্পষ্ট সতর্কবার্তার পর এখন আন্তর্জাতিক মহল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে  ইসরায়েল সত্যিই এই দখল পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে নাকি বৈশ্বিক চাপের মুখে পিছু হটবে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement