পূজার উৎসবে মদপান, স্বপ্নময় জীবন শেষ নন্দিনীর

গত জানুয়ারিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ১৩৩তম স্থান অর্জন করেছিলেন মানিকগঞ্জের নন্দিনী রানী সরকার (১৮)। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ভর্তি হন।

পরিবারের আশা ছিল, পড়াশোনা শেষে দরিদ্র পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে তিনি অবদান রাখবেন। কিন্তু এবারের দুর্গাপূজায় তার স্বপ্ন চুরমার হলো।

রোববার (৫ অক্টোবর) ভোরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বাবা অনিল চন্দ্র সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের পর পরিবারের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বইতে শুরু করেছিল। তবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে পড়াশোনার ব্যয়বহুল প্রক্রিয়ায় পরিবারে দুশ্চিন্তাও ছিল। সেই সময় সংবাদপত্রে নন্দিনীর সাফল্যের খবর প্রকাশ হলে অনেকের সহায়তা এসেছিল।

পরিবারের বরাত অনুযায়ী, নন্দিনী সরকারের চাচা গণেশ চন্দ্র সরকার প্রতিবছর পূজায় নন্দিনীর সঙ্গে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভান্ডারিয়া গ্রামে আসেন। এবারের সপ্তমীর দিনও সেখানে গিয়েছিলেন। বিজয়া দশমীতে বিকেলে নন্দিনী বান্ধবীদের সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনে যায় এবং মদপান করে।

এরপর বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ হয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থবোধ করলে সেই রাতেই বাড়ি ফিরানো হয়। একদিন পর শনিবার রাতে পুনরায় অসুস্থ হলে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে মারা যান নন্দিনী।

নন্দিনীর নানা সঞ্জয় কুমার সরকার জানিয়েছেন, বিজয়া দশমীতে বান্ধবীদের সঙ্গে বিসর্জনের সময় মদপান করেছিলেন। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, মদপান করার পর অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়।

শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুম খান জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং মদ বিক্রেতাকে আটক করার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা অর্জন করা নন্দিনীর জীবনকাল খুব অল্প সময়ে শেষ হয়ে গেল, যা পরিবার এবং এলাকায় গভীর শোকের ছাপ ফেলেছে।