বজ্রপাত আরও তীব্র হবে, গ্রামীণ মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকিতে

বজ্রপাত আরও তীব্র হবে, গ্রামীণ মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকিতে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২৩:২৩, ৬ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঘনত্ব ও তীব্রতা বাড়ছে, গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে – বিশেষজ্ঞ

বাংলাদেশে আগামীতে বজ্রপাতের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল মান্নান। তিনি জানান, প্রাথমিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর অভাবের কারণে গ্রামীণ জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ড. মান্নান বলেন, যারা গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় কৃষিকাজ, মাছ ধরা বা অন্যান্য বাইরের কাজে নিয়োজিত, তারা সতর্কতা ও সীমিত অবকাঠামোর কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ঘনঘন বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের শিকার হতে পারে।

তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং বিজলির ঝলকানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পূর্বে বজ্রপাত কম হওয়া এলাকায়ও বেশি ঘনঘন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটতে পারে।

ড. মান্নান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০০ জন মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। তিনি জানান, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বজ্রপাতের ঘনত্ব এবং তীব্রতা বেড়েই চলেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে কনভেক্টিভ অ্যাভেইলেবল পটেনশিয়াল অ্যানার্জি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা বজ্রপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া, আঞ্চলিক দূষণ বৃদ্ধির কারণে বায়ুর মানও খারাপ হচ্ছে, যা বজ্রপাত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

ড. মান্নান বলেন, গ্রামীণ এলাকায় লম্বা গাছ কেটে ফেলার ফলে বজ্রপাত থেকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা কমে গেছে এবং মানুষের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, উচ্চ আর্দ্রতা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতা প্রাক-বর্ষা মৌসুমে তীব্র বজ্রপাতের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে।

সাম্প্রতিক আঞ্চলিক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৩০০ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা যান, যার মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে।

২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে প্রায় ১২০টি বজ্রপাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাটিতে আঘাত করেছে।

এই তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ এবং আঞ্চলিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায় সতর্কতা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এখন অত্যন্ত জরুরি।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement