মুসার পবিত্র পর্বত থেকে বিলাসবহুল রিসোর্ট: মিশরের বিতর্কিত প্রকল্প

Published : ০০:৪২, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মিশরের সিনাই বা মুসার পর্বত, যেখানে মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন হযরত মুসা (আ.), বর্তমানে বিলাসবহুল মেগা-রিসোর্টে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে মিশর সরকার। এই পদক্ষেপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই পর্বত কেবল ইসলাম নয়, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের জন্যও অত্যন্ত পবিত্র। বিশ্বাস করা হয়, এখানে হযরত মুসা (আ.) ঐশ্বরিক বাণী পেয়েছিলেন। স্থানীয়রা এই পবিত্র স্থানটিকে ‘জাবাল মুসা’ নামে চেনেন।
স্থানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তালিকাভুক্ত। এখানে রয়েছে প্রাচীন মঠ, শহর এবং পাহাড়। মিশর সরকার চালু করেছে ‘গ্রেট ট্রান্সফিগারেশন প্রজেক্ট’, যার আওতায় এই পাহাড়ে তৈরি করা হবে বিলাসবহুল হোটেল, ভিলা, শপিংমল, নতুন রাস্তা, বিমানবন্দর এবং ক্যাবল কারও। আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার এই প্রকল্পকে ‘বিশ্বের সব ধর্মের জন্য মিশরের উপহার’ হিসেবে প্রচার করছে। তবে স্থানীয় বেদুইন সম্প্রদায়ের ইচ্ছার বিপরীতে এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ ভ্রমণ লেখক বেন হফলার বলেন, “প্রকল্পটি বেদুইনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি কোনো স্থানীয় উন্নয়ন নয়, বরং বাইরের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছে।”
পবিত্র স্থানে খ্রিস্টানদের ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি মঠও রয়েছে, যা গ্রিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই কারণে মিশরের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ করেছে গ্রিস। চলতি বছরের মে মাসে একটি মিশরীয় আদালত রায় দেয়, যে বিশ্বের প্রাচীনতম খ্রিস্টান মঠ সেন্ট ক্যাথেরিনস সরকারি জমিতে অবস্থিত। এই রায়ের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
তবু বিতর্কিত প্রকল্পটি এগোচ্ছে, যেখানে বিলাসবহুল হোটেল, মোটেল এবং রিসোর্ট দ্রুত নির্মাণ করা হচ্ছে। জেরুজালেমের গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেট জানিয়েছে, তাদের পবিত্র স্থানের ওপর ধর্মীয় কর্তৃত্ব রয়েছে এবং হযরত মোহাম্মদ (সঃ) স্বয়ং এই উপাসনালয়ের জন্য সুরক্ষা প্রদান করেছিলেন।
মিশর সরকার এই প্রকল্পকে পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবিত করার একটি অর্থনৈতিক ভরসা হিসেবে দেখছে। করোনার পর পুনরুদ্ধার, গাজা যুদ্ধ ও আঞ্চলিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাত পুনরায় চালু করতে সরকার ২০২৮ সালের মধ্যে তিন কোটি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্য স্থির করেছে।
কিন্তু সমালোচকেরা মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেন্ট ক্যাথরিন মঠ ও সিনাই পর্বতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য রক্ষা হলেও চারপাশের পরিবেশ এবং বেদুইনদের শতাব্দীপ্রাচীন জীবনধারা চিরতরে পরিবর্তিত হবে।
BD/AN