ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একজোট কাতার, সৌদি ও জর্ডান

Published : ১২:০৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন ইস্যুতে নতুন করে তীব্র প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যে। ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের মানচিত্রে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে কাতার,
সৌদি আরব ও জর্ডান। চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই এমন পদক্ষেপকে তারা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট পশ্চিম তীরে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে পাস হলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বড় অংশ ইসরায়েলি মানচিত্রে যুক্ত হয়ে পড়বে। এতে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কার্যত ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
নেসেটের ১২০ সদস্যের মধ্যে ২৫ ভোটে পক্ষে এবং ২৪ ভোটে বিপক্ষে পড়ে বিলটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়। এখন এটি পাঠানো হবে নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে। চার ধাপে ভোটাভুটির এটি প্রথম ধাপ মাত্র।
এদিকে, ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস—দু’জনেই বিলটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা এক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই। হামাস একে “দখলদার শক্তির ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন” বলে মন্তব্য করেছে।
সবচেয়ে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই বিল ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকারের নগ্ন লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সব ধরনের দখলদারী ও বসতি সম্প্রসারণের পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করছে। জর্ডানও এক বিবৃতিতে বলেছে, নেসেটের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, যা দুই রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তি নষ্ট করবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে।
মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এই বিল নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। দেশটির প্রশাসনের মতে, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘গাজা শান্তি পরিকল্পনা’র জন্য সরাসরি হুমকি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই বিলকে কোনোভাবেই সমর্থন করবে না।
বিলটির বিরোধিতা করেছেন এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও। তার মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশ্যে বিরোধী দলের উসকানিমূলক পদক্ষেপ।
বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় সাত লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে ঘোষণা করা। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই বিল কার্যকর হলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
বিডি/এএন