জুলাই সনদ: প্রধান উপদেষ্টার আদেশে বাস্তবায়নের দাবি

জুলাই সনদ: প্রধান উপদেষ্টার আদেশে বাস্তবায়নের দাবি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০১:১৩, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিশেষ আদেশ রাষ্ট্রপতি নয়, বরং প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি হওয়া উচিত— এমন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বুধবার (২২ অক্টোবর) যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এ প্রস্তাব পেশ করেন দল দুটির শীর্ষ নেতারা। প্রথমে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসে। এরপর জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেয়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. তাহের বলেন, “বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির নয়, বরং প্রধান উপদেষ্টার। আইনি কাঠামোর ভেতরেই সেটি করা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে সরকারকে আমরা সুপারিশ করেছি। অধ্যাদেশ নয়, বিশেষ আদেশ আকারে বাস্তবায়নই এখন অধিকতর যৌক্তিক হবে।”

তিনি জানান, “জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে সরকার, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞ কমিটিগুলোর সঙ্গে বৈঠক চলছে। সকলের মতামত প্রায় একই— এটি ‘আদেশ’ হিসেবে জারি করতে হবে। পরে গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদনই হবে পরবর্তী ধাপ।”

এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, জুলাই সনদের সাংবিধানিক আদেশটি রাষ্ট্রপতি নয়, ড. ইউনূস নিজেই প্রধান হিসেবে জারি করবেন। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার বৈধ প্রতিনিধি তিনিই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “রাষ্ট্রপতির সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। জুলাই সনদের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর অনুমোদন গণভোটের মাধ্যমেই আসবে, এবং এরপরই জাতীয় সংসদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান তৈরির পথ সুগম হবে।”

জামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেন, “গণভোটের বিষয়টি নিয়ে বিএনপি শুরুতে অনাগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে না হয়ে পৃথকভাবে হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। নভেম্বরেই গণভোট আয়োজন সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “প্রশাসনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা এখনো একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি আনুগত্যশীল। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষতা ফেরাতে বদলি ও পদায়নের মাধ্যমে ভারসাম্য আনা জরুরি।”

এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম জানান, তাদের দল জুলাই সনদে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করবে তখনই, যখন এর বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা পাবে।

তিনি বলেন, “জুলাই সনদে থাকা ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। গণভোটে অনুমোদন পাওয়ার পরই সংসদীয় কাঠামোর মাধ্যমে নতুন সংবিধান রচনার কাজ শুরু হবে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে আদালতে তোলা হয়েছে— এটি ন্যায়বিচারের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “ইসি বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে, আবার কিছু দলের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে কমিশনের পুনর্গঠন জরুরি।”

তিনি আরও জানান, এনসিপি তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ‘শাপলা’ নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়।

জনপ্রশাসনে বদলি-পদায়নের বিষয়েও অসন্তোষ জানিয়ে নাহিদ বলেন, “যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার বদলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভাগাভাগির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি অযৌক্তিক। এটি জুলাই সনদের কাঠামোর মধ্যেই আলোচিত হবে, গণভোটের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।”

এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন সারজিস আলম, সামান্তা শারমিন ও খালেদ সাইফুল্লাহ।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement