যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে ইতিহাস রচনা করলেন জোহরান মামদানি। প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক হিসেবে তিনি নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে তার জয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নিউইয়র্কের রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়।
ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে প্রাণবন্ত অনলাইন প্রচারণা এবং তরুণ ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয়তা পান মামদানি। তার সমর্থকদের মতে, তিনি এক নতুন প্রগতিশীল ও নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির প্রতীক।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্ম নেওয়া মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি বোউডয়িন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কলেজ জীবনে তিনি “স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন” সংগঠনের ক্যাম্পাস শাখা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান নিউইয়র্কের তরুণ প্রজন্মের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি এক্স (টুইটার)-এ লেখেন, “আমি সবসময় স্পষ্টভাবে বলব—ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।”
বিডিএস (বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস) আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে মামদানি অহিংস রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, তার এই অবস্থান মানবতা ও ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাংবাদিক মেহদি হাসানের এক সাক্ষাৎকারে মামদানির মন্তব্য আলোচনার জন্ম দেয়। প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “যদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে আসেন, আমি মেয়র হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করব। এই শহরের মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।”
তিনি “গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা” স্লোগান থেকেও নিজেকে আলাদা করেননি, যদিও এটি কিছু রক্ষণশীল ও ইহুদি নেতার কাছে বিতর্কিত মনে হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে এক পডকাস্টে মামদানি বলেন, “৯/১১-পরবর্তী সময়ে বড় হওয়া একজন মুসলিম হিসেবে আমি জানি, কীভাবে আরবি শব্দগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এই স্লোগান আসলে শোষিত মানুষের প্রতি সংহতির প্রতীক, সহিংসতার আহ্বান নয়।”
প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুয়োমো মামদানির মুসলিম পরিচয় ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানকে ইস্যু করে তাকে “অ্যান্টি-সেমিটিক” বলে অভিযুক্ত করেন। তবে মামদানি স্পষ্টভাবে বলেন, তার সমালোচনা কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং মার্কিন ও ইসরায়েলি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে।
ভোটের আগের জরিপে মামদানি এগিয়ে ছিলেন ৪৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে, যেখানে কুয়োমোর সমর্থন ছিল ৩২ শতাংশ এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার ১৬ শতাংশ। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুয়োমোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “স্লিওয়াকে ভোট দেওয়া মানে মামদানিকেই ভোট দেওয়া।”
তবে নিউইয়র্ক সিটি যেহেতু ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি, তাই শুরু থেকেই মামদানি ছিলেন মেয়র নির্বাচনের সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী। শহরটিতে শেষবার কোনো রিপাবলিকান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০১ সালে।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে জোহরান মামদানি শুধু নিউইয়র্কের ইতিহাসই বদলাননি, বরং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।































