ভারতের জিডিপি ডেটায় ঘাটতি, আইএমএফের ‘সি’ গ্রেড

ভারতের জিডিপি ডেটায় ঘাটতি, আইএমএফের ‘সি’ গ্রেড ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৩:৩০, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

জিডিপি ও ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্সের মানোন্নয়ন সত্ত্বেও ভারত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে এবারও পেয়েছে ‘সি গ্রেড’।

চলতি অর্থবছরের (২০২৫–২৬) দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশে পৌঁছেছে বলে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল—যা গত বছরের একই সময়ের ৫.৬ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

কিন্তু এত উন্নতির পরও আইএমএফের ‘সি গ্রেড’ পাওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএমএফ ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া : ২০২৫ আর্টিকেল ফোর কনসালটেশন’ প্রতিবেদনে জানায়—পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট তথ্য না থাকায় ভারতকে সি গ্রেড দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও তথ্যগত ঘাটতি থাকার কারণে এই গ্রেড অপরিবর্তিত রয়েছে।

এ নিয়ে বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে কংগ্রেস সরকারকে তীব্র সমালোচনা করছে। কংগ্রেস নেতা পি. চিদাম্বরম প্রশ্ন তুলেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরও কেন আইএমএফ ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্সকে সি গ্রেডে রেখেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এবং ভারত এখন আর আগের মতো ‘ফ্র্যাজাইল ফাইভ’ অর্থনীতির তালিকায় নেই।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে—তাদের পরিসংখ্যানে কোনো সমস্যা নেই এবং দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতি হিসেবে ভারতের অবস্থান এখন আরও শক্তিশালী। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ভারতের জিডিপি বর্তমানে প্রায় ৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিক্স (এনএসএ) হলো এমন এক বিস্তৃত হিসাবব্যবস্থা যা জাতিসংঘের ‘সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস’-এর নীতির ওপর ভিত্তি করে জিডিপি, জাতীয় আয়, সঞ্চয়, ব্যয় এবং মূলধন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক নির্ণয় করে।

আইএমএফ সাধারণত তথ্যের মান ও প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোকে চার গ্রেডে ভাগ করে—এ, বি, সি এবং ডি। ‘সি গ্রেড’ মানে হলো: গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে, যা বিশ্লেষণকে কিছু মাত্রায় বাধাগ্রস্ত করে। ভারতের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো—এখনো ২০১১–১২ সালের ভিত্তিবছরের তথ্য ব্যবহার, উৎপাদক মূল্য সূচকের (পিপিআই) পরিবর্তে পাইকারি মূল্য সূচক (ডব্লিউপিআই) ব্যবহার, এবং এনবিএফসি, পরিবার ও আর্থিক খাতগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগসংক্রান্ত তথ্যের সীমাবদ্ধতা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব জটিলতা বহুদিন ধরেই প্রবাহমান। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অরুণ কুমার বলেছেন—২০১১–১২ সালের ভিত্তিবর্ষ ব্যবহার এখন আর যৌক্তিক নয়। নোটবন্দি, জিএসটি, এনবিএফসি–সংকট এবং কোভিড–১৯ মহামারির মতো বড় ধাক্কা সংগঠিত ও অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রকে গভীরভাবে প্রভাবিত করলেও জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতি সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়নি।

তিনি মনে করেন, বহু প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও তার প্রতিফলন জিডিপিতে দেখা যায়নি। পরিষেবা খাতের সার্ভেতে বহু তালিকাভুক্ত কোম্পানি আর সক্রিয় না থাকলেও সেগুলোর তথ্য হিসাবরক্ষণে রয়ে গেছে—যা ডেটাকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।

অন্যদিকে অর্থনীতি বিশ্লেষক এমকে বেণুর মতে, আইএমএফের রিপোর্টে স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে—ভারতের জিডিপি গণনার পদ্ধতিতে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তির ওপর এই সি গ্রেড প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর ভাষায়, তথ্যগত ‘সাইজেবল ডিসক্রেপেন্সি’ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এবং কোভিড–পরবর্তী সময়ে সরকারি প্রবৃদ্ধির তথ্যকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

সরকার বলছে—এগুলো কেবল পদ্ধতিগত সমস্যা, বহু বছর ধরে একই গ্রেড বজায় আছে এবং ভারতের সামগ্রিক অগ্রগতিতে এর তেমন প্রভাব নেই। তবে বিরোধী দল, অর্থনীতি বিশ্লেষক এবং গবেষকদের মতে—তথ্যসংগ্রহ, পরিমাপ এবং ভিত্তিবছর হালনাগাদ না হওয়াই মূল সমস্যার উৎস।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement