ধীরে ধীরে দেখা দিচ্ছে কেয়ামতের আলামত
Published : ০৬:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কেয়ামত বা মহাপ্রলয় কখন সংঘটিত হবে—এ বিষয়ে কোরআন বা হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই।
তবে নবী করিম (সা.) মানবজাতিকে সতর্ক করার জন্য কেয়ামতের অনেক ছোট ও বড় আলামত সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে গেছেন। এর মধ্যে অনেক ছোট আলামত ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করা হয়, তবে বড় আলামতগুলো এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
ছোট আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছে—ফুরাত নদীর তলদেশ থেকে সোনার পাহাড় উন্মোচিত হওয়া, আরব ভূখণ্ডে আবার সবুজ বন-তৃণলতা ছড়িয়ে পড়া, সমাজে মদ্যপান, ব্যভিচার ও সুদের ব্যাপক প্রসার দেখা দেওয়া ইত্যাদি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেকেও কেয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) তাঁর দুটি আঙুল পাশাপাশি করে বলেছিলেন—যেমন এ দুটি আঙুল খুব কাছাকাছি, আমাকেও কেয়ামতের এত নিকটে পাঠানো হয়েছে। [সহীহ বুখারী]
তিনি শেষ নবী, তার পর আর কোনো নবী আগমন করবেন না—এ ঘোষণা নিজেই কেয়ামতের আগমনের নৈকট্য নির্দেশ করে।
আরেকটি সহীহ হাদিসে এসেছে, কেয়ামতের আগে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ানো বেদুঈনরা প্রতিযোগিতা করবে কে সবচেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারে। আজকের আরব বিশ্বের বিশাল অট্টালিকা ও প্রতিযোগিতামূলক ভবন নির্মাণ সেই ভবিষ্যদ্বাণীকেই স্মরণ করিয়ে দেয়; যেমন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা।
নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, সময় ঘনিয়ে এলে মসজিদগুলো রাজপ্রাসাদের মতো সাজানো হবে। একইসঙ্গে হত্যা-সংঘাত এতটাই বাড়বে যে মানুষ বুঝবে না কেন হত্যা করছে, আর নিহত ব্যক্তিও জানবে না কেন তাকে হত্যা করা হলো। বর্তমান সমাজের চিত্র এ ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
হাদিসে আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে, সুদের প্রচলন কেয়ামতের আগে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, এমনকি মানুষ চাইলেও এর প্রভাব থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে পারবে না। আজকের বৈশ্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা এ বাস্তবতারই প্রতিফলন।
তিনি বলেছেন, কেয়ামতের আগে স্বাক্ষরতার হার বাড়বে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান হ্রাস পাবে। বক্তার সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষের সংখ্যা কমে যাবে।
মুসলিম শরিফে হযরত হুযাইফা ইবনে আসীদ আল-গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—দশটি নির্দিষ্ট আলামত না দেখা পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না।
কোরআনে বলা হয়েছে—
“তারা কি কেবল এই অপেক্ষায় আছে যে কেয়ামত হঠাৎ এসে যাবে? প্রকৃতপক্ষে এর নিদর্শনসমূহ তো ইতোমধ্যে এসে গেছে।” (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ১৮)
আরও বলা হয়েছে—“কেয়ামত নিকটে চলে এসেছে।”
কেয়ামতের সর্বশেষ ও ভয়াবহ আলামতগুলোর একটি হলো দাজ্জালের আগমন। দাজ্জাল কেয়ামতের প্রায় চল্লিশ দিন আগে প্রকাশ পাবে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রতারণা চালাবে। সে নকল জান্নাত-জাহান্নাম দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিতে চাইবে। মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে—তার গতি হবে ঝড়ো বৃষ্টিকে তাড়িয়ে নেওয়া বাতাসের মতো দ্রুত।
মুসলিম শরিফের আরেক হাদিসে উল্লেখ আছে—রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামত আগে দশটি আলামত অবশ্যই প্রকাশ পাবে:
১. এক ভয়াবহ ধোঁয়া
২. দাজ্জালের আবির্ভাব
৩. দাব্বাতুল আরদ নামে অদ্ভুত এক সৃষ্টি প্রকাশ পাবে
৪. সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে
৫. ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন
৬. ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব
৭. পূর্বাঞ্চলে ভূমিধস
৮. পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিধস
৯. আরব উপদ্বীপে বড় ধরনের ভূমিধস
১০. ইয়ামান দিক থেকে অগ্নি বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে তাড়িয়ে নেবে
(মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)
বিডি/এএন

































