১৬ বছরে আওয়ামী শাসন: ঋণের বোঝা দ্বিগুণেরও বেশি

১৬ বছরে আওয়ামী শাসন: ঋণের বোঝা দ্বিগুণেরও বেশি

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১১:৪১, ২১ আগস্ট ২০২৫


২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়। তখন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-আমলারা দাবি করতেন,‘ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক কিংবা দুবাইয়ের মতো সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।’

কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে ২০১০ সালের নভেম্বরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর পর ধাপে ধাপে ভারত শুধু সড়কপথ নয়, রেলপথ ও নৌপথ ব্যবহার করার সুযোগও পেয়ে যায়। ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যের পণ্য বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নদীপথ হয়ে আখাউড়া,আশুগঞ্জের মাধ্যমে ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে পৌঁছাতে থাকে। একই সঙ্গে ভারতকে বাংলাদেশের চারটি নদীপথ ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হয়। এতে কলকাতা ও মুর্শিদাবাদ সরাসরি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়,এই ট্রানজিট কি বাংলাদেশকে সত্যিই সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক বা দুবাইয়ের মতো করেছে? সোজা উত্তর,কোনোভাবেই নয়। বরং দৈনিক আজকালের খবর (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) অনুযায়ী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন,ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার ১৬ বছরে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ৩৭ লাখ টাকা, অথচ শুধু নিরাপত্তা খাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ যে ট্রানজিটকে উন্নয়নের হাতিয়ার বলা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে আর্থিক ক্ষতি ও জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের প্রতীকে।

শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থে নিজ দেশের জনগণের স্বার্থকে যেভাবে উপেক্ষা করেছেন, তা ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ক্ষমতার লোভে আঞ্চলিক শক্তির কাছে সার্বভৌমত্ব বিসর্জন ও জনগণের অধিকার হরণ,এই বাস্তবতা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে পাচার করেছে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার,বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা (দৈনিক সমকাল, ২ ডিসেম্বর ২০২৪)। শুধু গত পাঁচ বছরের পাচারের অঙ্কই জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। এই অর্থ দিয়ে ৮৭টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো।

২০০৯ সালে সরকারের ঋণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের সময় সেই ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ লাখ কোটি টাকায়। মাথাপিছু ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দেড় লাখ টাকা। বিশাল অঙ্কের এই ঋণের বড় অংশই এসেছে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে, যার বড় অংশই লুটপাট হয়েছে মেগা প্রকল্পের নামে। আর এই লুটপাটের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শেখ পরিবার।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টানা ১৬ বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে গেছে। যদিও এককভাবে তারা চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, তবে রাজপথে প্রতিরোধ বজায় রেখেছিল। সেই ধারাবাহিকতার পথ ধরে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়। এই গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিল নির্ণায়ক। তারেক রহমান দলের লাখো নেতাকর্মীকে রাজপথে অটল থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং বিজয়ের বন্দরে আন্দোলনকে পৌঁছে দিয়েছেন।

তারেক রহমান শুধু রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সূত্রেই নয়, ব্যক্তিগত যোগ্যতায় জনগণের কাছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ নির্বাসনে থেকেও তিনি আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে ছিলেন। তার ডাকে বিএনপির লাখো নেতাকর্মী সংগঠিত হয়েছে, ছাত্রসমাজ জেগে উঠেছে, আর রাজপথে ফ্যাসিস্ট সরকারের ভিত কেঁপে উঠেছে। আজ যখন দেশ নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, তখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা,তারেক রহমানের নেতৃত্বেই শুরু হবে স্বাধীন, মর্যাদাবান ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নতুন যাত্রা।

শেখ হাসিনার আমলে বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, সাজানো মামলায় বন্দি রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। এই নির্যাতন-নিপীড়নের বোঝা সইতে না পেরে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো অকালমৃত্যুবরণ করেন।

অন্যদিকে তারেক রহমান ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান এবং তারপর থেকে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুর সময় তার পাশে দাঁড়াতে না পারলেও বিদেশ থেকে তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপির ১,৫৫১ নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে ৪২৩ জনকে এবং দেড় লাখ মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে। শুধু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেই শহীদ হয়েছেন বিএনপির ৪২২ জন কর্মী। এই স্বৈরাচার পতনের পেছনে তারেক রহমানের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

তারেক রহমান ১৯৮৯ সালে বগুড়ায় প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। তারপর থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে নিবেদিত ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক প্রচার কৌশল প্রণয়নে ভূমিকা রেখে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় আসেন। তার রাজনৈতিক দর্শনের মূল ভিত্তি হলো শিষ্টাচার, প্রতিপক্ষকে সম্মান ও ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করা। এসব গুণ তাকে আদর্শ রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আজকের বাংলাদেশে মানুষ কথার রাজনীতি নয়, কার্যকর পরিবর্তন চায়। এবং সেই পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম নেতৃত্ব হিসেবে তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখছে। দলের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরবেন তারেক রহমান এবং বিজয়ী হয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দেবেন।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement