ড. ইউনূস জানালেন: নির্বাচনের পর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছাড়বেন সম্পূর্ণ

ড. ইউনূস জানালেন: নির্বাচনের পর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছাড়বেন সম্পূর্ণ

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২১:১৪, ২১ আগস্ট ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সমস্ত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকে সরে আসবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

ড. ইউনূস নিবন্ধে জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নির্বাচিত বা নিযুক্ত কোনো পদে তিনি থাকবেন না। তার সরকারের মূল লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা, যেখানে সব রাজনৈতিক দল ভোটারদের কাছে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে থাকা নাগরিকসহ সকল বৈধ ভোটার যাতে ভোট দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে।

ড. ইউনূস লিখেছেন, এক বছর আগে হাজার হাজার সাহসী শিক্ষার্থী সমাজের সমর্থন নিয়ে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শেষে একজন স্বৈরাচারী ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়, এবং ছাত্রনেতাদের অনুরোধে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে গঠিত মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ করেন তিনি।

গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবিতে। এটি বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূচনা করে, যা দেখায় কীভাবে তরুণরা যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বৈষম্য মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে পারে।

ড. ইউনূস উল্লেখ করেছেন, দেশ স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাচ্ছে। অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক স্বৈরাচারী সরকার ১৫ বছরে বছরে ১০–১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধারও করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের অব্যবস্থা দেখে তিনি হতবাক হন। পুলিশ দায়িত্ব পালন করছিল না, রিজার্ভ কমছিল, সরকারি কর্মচারীরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তবে ধীরে ধীরে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হয়। নতুন রাজনৈতিক দল এবং সশস্ত্র বাহিনী সহায়তা করেছে।

ড. ইউনূস স্পষ্ট করেছেন, নির্বাচন শেষে তিনি কোনো পদে থাকবেন না। সরকারের মূল লক্ষ্য অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। পাশাপাশি, বিদেশী ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, নির্বাচনের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংবিধানিক সংশোধনী আনা, যা পুনরায় স্বৈরাচারী শাসনকে আটকাবে।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের মানুষ যাতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, তা লাখ লাখ মানুষের দৃঢ়তা, কল্পনা ও সাহসের ফল। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দায়িত্ব যারা নিয়েছেন, তারাই দেশের সর্বোত্তম আশা।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement