এনসিপি ছাড়লেন যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন

এনসিপি ছাড়লেন যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:০৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৭ আসনে এনসিপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ও দল—দুটো থেকেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ ও আবেগঘন পোস্টে তিনি পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, তার পদত্যাগের মূল কারণ শুধু জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট নয়, বরং যে প্রক্রিয়ায় এই জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটিই তাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে।

ডা. তাজনুভা জাবিন লিখেছেন, বিষয়টিকে রাজনৈতিক কৌশল বা নির্বাচনী সমঝোতা হিসেবে দেখানো হলেও বাস্তবে এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত আয়োজন। সারাদেশে সমারোহ করে মনোনয়ন সংগ্রহের ডাক দিয়ে ১২৫ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩০টি আসনে সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার ফলে বাকি প্রার্থীদের কার্যত নির্বাচন করার সুযোগই বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে সিদ্ধান্তটি এত দেরিতে জানানো হয়েছে, যাতে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও দাঁড়াতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন হারানোর ভয়ে জোটের বিরোধিতা করার অভিযোগ তোলা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, তার আসনে যদি সমঝোতা হয়, তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন না। কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সেটার সুযোগই দেওয়া হয়নি।

ডা. তাজনুভা জাবিন তার পোস্টে এনসিপির ভেতরের নেতৃত্ব সংকট, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দলটি যে গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক, মধ্যপন্থা, নারী ও বিভিন্ন জাতিসত্তার রাজনীতির কথা বলেছিল, সেই আদর্শ বাস্তবে ধারণ করা হয়নি। তিনি নিজেকে দলের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য উল্লেখ করে বলেন, এই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার জন্য অত্যন্ত কষ্টের হলেও সম্মান বজায় রাখার জন্য এটিই একমাত্র পথ ছিল।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যস্ত, যার ফলে নতুন ও বাংলাদেশপন্থী মধ্যপন্থার রাজনীতি গড়ে তোলার সুযোগ নষ্ট হচ্ছে। যারা সত্যিকার অর্থে এনসিপির নীতিকে ধারণ করেছিলেন, তারাই একে একে দল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

জামায়াতের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপি যদি নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারত, তাহলে ভবিষ্যতে যে কোনো রাজনৈতিক জোট সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রথম নির্বাচনেই সব পথ বন্ধ করে দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এটিকে তিনি রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং পরিকল্পিত জিম্মি করার প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেন।

ডা. তাজনুভা জাবিন জানান, তার এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন। নির্বাচন উপলক্ষে তার পরিবারও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবুও আত্মসম্মান ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে তিনি আর এই রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, যারা তার নির্বাচনী প্রচারণায় অনুদান দিয়েছেন, তাদের অর্থ পর্যায়ক্রমে ফেরত দেওয়া হবে এবং সে বিষয়ে আলাদা করে নির্দেশনা জানানো হবে। সমর্থন ও ভালোবাসার জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পোস্টের শেষাংশে তিনি বলেন, তিনি আগে কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তিনি রাজপথে নেমেছিলেন একটি পরিবর্তনের আশায়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক পরিবর্তন, মধ্যপন্থী ও বাংলাদেশপন্থী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য নিজের অবস্থান থেকে কাজ চালিয়ে যাবেন।

উল্লেখ্য, এর আগের দিন শনিবার দিবাগত রাতে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাও দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা দলটির ভেতরে চলমান অস্থিরতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement