ঋণ লেনদেনে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও মানবিকতার শিক্ষা

ঋণ লেনদেনে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও মানবিকতার শিক্ষা

TheBusinessDaily

Published : ২৩:৪৪, ৩০ জুন ২০২৫

জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ে অনেক সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যখন আর্থিক সহায়তা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এমন মুহূর্তে ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। তবে ইসলামী শরিয়াহ ঋণ গ্রহণ ও প্রদান উভয় ক্ষেত্রেই কিছু নির্দিষ্ট নৈতিক ও বিধিবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে, যা শুধু পার্থিব স্বস্তি নয় বরং পরকালীন সফলতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

ইসলাম সর্বপ্রথম ঋণ গ্রহণকে প্রয়োজনভিত্তিক হিসেবে গ্রহণ করেছে। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ঋণ নেওয়া অনুমোদিত হলেও বিলাসিতা বা হারাম অভ্যাস রক্ষায় ঋণ নেওয়া কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ব্যক্তি যদি নিজের চাহিদা ও ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য না করতে পারে এবং অহেতুক ঋণের আশ্রয় নেয়, তবে তা তাকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও গুনাহের পথে ঠেলে দিতে পারে।

লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আর্থিক লেনদেন লিখে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে কোরআনে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের ঋণ হলে তা লিখিতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো রকম বিরোধ সৃষ্টি না হয়। এ বিধান প্রমাণ করে ইসলাম ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার কতটা গুরুত্ব দেয়।

সুদ বা রিবা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাদিসে সুদ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সব শ্রেণির লোক—দাতা, গ্রহীতা, লেখক ও সাক্ষী—সমানভাবে গুনাহগার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুদের মাধ্যমে লভ্য যেকোনো লাভ শুধু নাজায়েজই নয়, বরং সমাজে বৈষম্য ও শোষণের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ঋণ গ্রহণের সময় পরিশোধের দৃঢ় নিয়ত রাখা ইসলামের একটি মৌলিক নৈতিক শিক্ষা। হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে ঋণ নেয়, আল্লাহ তার পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দেন। পক্ষান্তরে, কারও আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম হিসেবে গণ্য হয়।

ঋণের আদায়ের সময় ধৈর্য ও নম্রতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে ইসলামে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনের সময় সদাচরণ ব্যক্তি ও সমাজে সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা সৃষ্টি করে। আল্লাহর রাসুল ঋণ আদায়ের সময় নম্র ব্যবহারকারীর জন্য আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

যদি কোনো ঋণগ্রহীতা আর্থিক সংকটে পড়ে, তবে তাকে সময় দেওয়া বা সুযোগ দেওয়াকে শরিয়াহ একটি মানবিক নির্দেশ হিসেবে গণ্য করেছে। শুধু সময় দেওয়া নয়, বরং সামর্থ্য অনুযায়ী ঋণের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ ঋণ মাফ করে দেওয়াকেও কোরআন শ্রেষ্ঠ সদকারূপে উল্লেখ করেছে।

ঋণগ্রহীতার জন্য রয়েছে একটি বিশেষ দোয়া, যা আল্লাহর সাহায্য লাভে সহায়ক হতে পারে। এই দোয়া আল্লাহর কাছে হালাল রুজির জন্য প্রার্থনা এবং মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।

অন্যদিকে, ঋণ পরিশোধ করার পর ঋণদাতার জন্য দোয়া করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। এটি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।

ঋণ বিষয়ক ইসলামী নির্দেশনাগুলো আমাদের শেখায় দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা এবং মানবিক আচরণ। যদি এই নীতিমালাগুলো মেনে ঋণ লেনদেন পরিচালিত হয়, তাহলে সমাজে আস্থা, সহযোগিতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি আরও দৃঢ় হবে এবং ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ই উপকৃত হবে দুনিয়া ও আখিরাতে।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement