আগামীকাল পবিত্র আশুরা

আগামীকাল পবিত্র আশুরা

ধর্ম ডেস্ক:

Published : ১৯:৫৪, ৫ জুলাই ২০২৫

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে আগামীকাল রোববার (৬ জুলাই) সারাদেশে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র আশুরা উদযাপিত হবে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রস্তুত পুরান ঢাকার হোসেনী দালান। আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে মূল আনুষ্ঠানিকতা।

শনিবার (৫ জুলাই) মাগরিবের নামাজের পর থেকে খুতবা পাঠ ও আশুরার তাৎপর্য নিয়ে বয়ান করা হচ্ছে।

এদিন দিনব্যাপী দোয়া মোনাজাত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) গিলাবে (প্রতীকী) সম্মান প্রদর্শন করেন ভক্ত অনুরাগীরা। এছাড়া বিশেষ ফজিলতের আশায় অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা পালন করেছেন। 

রোববার সকাল ১০টায় প্রতি বছরের মতো এবারও আশুরার তাজিয়া মিছিল বের করা হবে। হোসেনী দালান থেকে মিছিলটি লালবাগ আজিমপুর হয়ে ঝিগাতলায় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশুরা উপলক্ষে হোসেনী দালান চত্বরে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।

ইসলামী বর্ষপঞ্জির সূচনালগ্নেই আগমন ঘটে এক মহিমান্বিত মাসের, আর সেটি হলো মহররম। মহররম মাসের ১০ম দিন ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। এটি ইসলামের ইতিহাসে একদিকে যেমন বরকত, রহমত ও বিজয়ের নিদর্শন, অন্যদিকে তেমনি এক হৃদয়বিদারক আত্মত্যাগের স্মারক।

আরবিতে ‘আশারা’ অর্থ ১০। সেখান থেকেই মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট দিনের নাম নয়—এটি ইতিহাস, শিক্ষা, আদর্শ ও আত্মিক বিপ্লবের এক অনন্য প্রতীক।

আল্লাহ তাআলা এ দিনটিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। আশুরার দিনই আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন।

এই দিনেই তিনি নুহ (আ.)-এর জাহাজকে মহাপ্লাবনের পর নিরাপদে ‘জুদি’ পর্বতে স্থির করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এই দিন আগুন থেকে মুক্তি লাভ করেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে উদ্ধার পান, আইয়ুব (আ.) রোগমুক্ত হন, সুলাইমান (আ.) রাজত্ব ফিরে পান এবং হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন ও আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। এই দিনই ইয়াকুব (আ.) তার বহুদিনের হারানো সন্তান ইউসুফ (আ.)-কে ফিরে পান। আশুরা তাই নবী-রাসুলদের বিজয়, মুক্তি ও করুণার দিন হিসেবেও বিবেচিত।
 
আশুরা কেবল অতীত নবী-রাসুলদের ঘটনার স্মরণ নয়; এই দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এক অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগ—কারবালার প্রান্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত।

কারবালার আত্মত্যাগ শুধু কাঁদার জন্য নয়, এটি শিক্ষা নেয়ার জন্য। হোসাইন (রা.) তার ভাষণে বলেন, যে শাসক আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, সুন্নাহবিরোধী কাজ করে, জুলুম চালায়- তার বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ায় না, তাদের প্রতিও আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।

কারবালার শিক্ষা হলো জুলুমের কাছে মাথা নত না করা, সত্যের জন্য দৃঢ় থাকা, অন্যায়ের প্রতিবাদে ভয় না পাওয়া। আশুরা আমাদের শেখায় অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পথে প্রয়োজনে জীবন দিতেও পিছপা না হওয়া।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement