মৃত্যুর পর যেসব আফসোস করবে মানুষ

Published : ১২:০২, ৯ আগস্ট ২০২৫
প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। আর মৃত্যুর পর একদল চির সুখের স্থান জান্নাতের মেহমান হবেন। আর আরেকদল ভয়ংকর দুঃখের স্থান জাহান্নামে যাবে। এটাই হবে সবচেয়ে আফসোসের বিষয়। সেসব আফসোসের দৃশ্য বড়ই হৃদয়বিদারক হবে। মানুষ পরকালীন জীবনে অনেক আক্ষেপ, অনুশোচনা ও আকাঙ্ক্ষা করবে। কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন সুরায় এসব আক্ষেপ, আকাঙ্খা ও আফসোসের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। মৃত্যুর মানুষের সেসব আফসোসগুলো কী?
মানুষের মৃত্যু সুনিশ্চিত। মৃত্যুর পর দুনিয়ার কর্মকাণ্ডের হিসাব-নিকাশ অনুষ্ঠিত হবে। দুনিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের হিসাব-নিকাশ দেশে কেয়ামতের দিন অনেক মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবে। সে সময় তাদের মাঝে ফুটে ওঠবে আকাঙ্খা, আফসোস আর আক্ষেপ। মানুষের সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে তা তুলে ধরেছেন। তাহলো-
১. হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম
মৃত্যুর পর নিজেদের কৃতকর্ম দেখে অবাধ্যতাকারীরা ভয় পেয়ে যাবে। আর মৃত্যু যন্ত্রণা ও আজাব থেকে বাঁচতে আকাঙ্ক্ষা করবে-
ذَلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَن شَاء اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَآبًا - إِنَّا أَنذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيبًا يَوْمَ يَنظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِي كُنتُ تُرَابًا
‘এই দিবস (পরকাল) সত্য। অতপর যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার কাছে ঠিকানা তৈরি করুক। আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যেক্ষ করবে যা সে সামনে (মৃত্যুর আগে) পাঠিয়েছে। আর (সেদিন তা দেখে) কাফেররা বলবে- ‘হায়, আফসোস! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৩৯-৪০)
২. হায়! যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম
দুনিয়াতে যারা পরকালকে অস্বীকার করতো। পরকালের নেয়ামতের বিষয়টি বিশ্বাস করতো না, তারা পরকালের জন্য নেক করতে না পারার জন্য মনে প্রাণে আক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
كَلَّا إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا - وَجَاء رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا - وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى - يَقُولُ يَا لَيْتَنِي قَدَّمْتُ لِحَيَاتِي - فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ - وَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ
‘এটা অনুচিত। যখন পৃথিবী চুর্ণ-বিচুর্ণ হবে আর আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন। এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কি কাজে আসবে? সে (আক্ষেপ করে) বলবে- ‘হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু আগে পাঠাতাম!’সেদিন তার শাস্তির মত শাস্তি কেউ দেবে না। আর তার বন্ধনের মত বন্ধনও কেউ দেবে না।’ (সুরা ফাজর : আয়াত ২১-২৬)
৩. হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো
মুমিন মাত্র ডান হাতে আমলনামা আকাঙক্ষা করবে। কিন্তু অপরাধী অবিশ্বাসী লোকেরা পরকালে বাম হাতে আমল নামা পেয়ে আকাঙ্ক্ষা করবে, আমলনামা না পাওয়ার, হিসাব না পাওয়ার এমনকি পরকালে যেন তারা মৃত অবস্থায় থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيهْ - وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيهْ - يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ
যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত।’ (সুরা হাক্বকাহ : আয়াত ২৫-২৭)
তারপরই দুনিয়ার ব্যাপারে আফসোস করবে, হা-হুতাশ করবে। আর জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা এসব বলতে থাকবে-
مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيهْ - هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيهْ - خُذُوهُ فَغُلُّوهُ - ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ - ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ - إِنَّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ - وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ - فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ - وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ - لَا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِؤُونَ
‘আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো উপকারে এলো না। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল। ফেরেশতাদের বলা হবে- এদের ধর, গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও। অতপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অতপর তাকে শৃঙ্খলিত কর, সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। আর মিসকিনকে খাবার দিতে উৎসাহিত করত না। অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোনো সুহূদ নেই। আর কোনো খাদ্য নেই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতিত। গোনাহগার ব্যতিত কেউ এটা খাবে না।’ (সুরা হাক্বকাহ : আয়াত ২৮-৩৭)
A