ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমান হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা সংকটাপন্ন এবং সেখানেই তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে জানা গেছে, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি এর আগে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর ওই কালচারাল সেন্টারে গিয়ে তিনি হাদির পাশেই বসে আলোচনা শুনছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিজিটাল ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া দ্য ডিসেন্ট দাবি করেছে, হাদিকে গুলি করা ব্যক্তি, হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি এবং ৯ ডিসেম্বর ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে উপস্থিত ব্যক্তির একাধিক ছবি তুলনামূলকভাবে যাচাই করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দ্য ডিসেন্ট জানায়, এই তিনটি ঘটনায় যে ব্যক্তির উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে, তার চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের এক ব্যক্তির চেহারার মিল রয়েছে।
মাধ্যমটির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার থেকে সংগৃহীত ৯ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের সংগৃহীত ১২ ডিসেম্বরের হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি এবং ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের অ্যাকাউন্টসহ আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন পেজ ও ব্যক্তির প্রোফাইলে প্রকাশিত ৫০টির বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—বাইকের পেছন থেকে ওসমান হাদির দিকে গুলি করা ব্যক্তিটির চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের এক ব্যক্তির মিল রয়েছে। পুরোনো সংবাদ অনুযায়ী, তিনি রাজধানীর আদাবর থানা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
এ ছাড়া দুটি ফেস ডিটেকশন অ্যাপ ব্যবহার করে ফয়সাল করিমের একাধিক ছবি যাচাই করেও ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা ব্যক্তির সঙ্গে তার মিল পাওয়া গেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গুলি চালানো ব্যক্তির বাম হাতে থাকা বিশেষ ডিজাইনের ঘড়িটির সঙ্গে একই ডিজাইনের ঘড়ি পরা একাধিক ছবি ফয়সাল করিম মাসুদের ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক প্রোফাইলে পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে ফয়সাল করিমের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় একটি অফিসে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের মামলায় তিনি প্রধান আসামি হিসেবে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে পরে কীভাবে তিনি মুক্তি পান, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে জানান, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্ত একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফয়সাল করিম মাসুদ (ছদ্মনাম দাউদ বিন ফয়সাল) নামের ওই ব্যক্তি সাবেক ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং আদাবর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
জুলকারনাইন সায়ের ওই পোস্টে ৯ ডিসেম্বর ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে তোলা একটি ছবিও শেয়ার করেন। ছবিটির প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, লাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত ফয়সাল ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ সালে ওসমান হাদির ঠিক পাশেই একটি বৈঠকে বসেছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলেও উল্লেখ করেন।
এর আগে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে রাজধানীর পল্টনের বিজয়নগর এলাকায় মোটরসাইকেলে করে আসা দুই দুর্বৃত্ত গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওসমান হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের ধরতে ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে।


































