খুলনায় সাংবাদিক বুলুর মৃত্যু: হত্যা নাকি আত্মহত্যা?

খুলনায় সাংবাদিক বুলুর মৃত্যু: হত্যা নাকি আত্মহত্যা? সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু। ছবি : সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:০২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খুলনায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা সে বিষয়ে বিভক্ত মত উঠে আসছে। নিহতের স্বজনদের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আপাতত কিছু বলা সম্ভব নয়; বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে লাশ উদ্ধারের আগে রূপসা সেতুতে এক নারীর সঙ্গে বুলুকে দেখা গেছে। কোস্ট গার্ডের একটি সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ওই নারী ও বুলুর মধ্যে তর্কবিতর্ক হচ্ছিল। একপর্যায়ে হঠাৎ বুলুকে সেতু থেকে লাফ দিতে দেখা যায়। নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলেও এরপর থেকে ওই নারীকেও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে বুলুই ছিলেন বড়। মেজো ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক বছর আগে মারা যান। ছোট ভাই আনিছুজ্জামান দুলু ঢাকায় ব্যবসা করেন। শিববাড়ি মোড়ে তাদের পৈতৃক বাড়ি চার বছর আগে বিক্রি হয়ে যায়। এরপর থেকে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন বুলু। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। প্রায় চার মাস আগে তার স্ত্রী নিখোঁজ হন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাগমারায় নতুন বাসায় ওঠার পরিকল্পনাও ছিল তার।

স্বজনরা জানান, স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বুলু। তার প্রথম স্ত্রী এলিজা পারভীন গত ১১ মে বের হয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ডুমুরিয়ার তানিয়া সুলতানাকে। কিন্তু সেই সংসারও টেকেনি, শেষমেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে।

ছোট ভাই আনিছুজ্জামান দুলু বলেন, “শনিবার রাতে তার সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা হত্যা। আত্মহত্যা হলে অন্তত একটি ফোন বা বার্তা দিত। হঠাৎ সুস্থ মানুষ এভাবে চলে যেতে পারে না।”

নিহতের শ্যালকের স্ত্রী নুরনাহার পারভীনও বলেন, “আমাদের ননদ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তিনি ভীষণ অশান্তিতে ছিলেন। তবে আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না। বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় বের হয়েছিলেন। আমরা হত্যাকাণ্ডই মনে করছি। পুলিশ যেন গভীরভাবে তদন্ত করে।”

পুলিশ জানিয়েছে, বুলুর মৃত্যুকে আপাতত রহস্যজনক বলে ধরা হচ্ছে। অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। সেতুর সিসিটিভি ফুটেজ ও উদ্ধার হওয়া মোবাইল পরীক্ষা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

নৌপুলিশ রূপসা ফাঁড়ির এসআই বেল্লাহ হোসেন জানান, উদ্ধারকালে তার পরনে ছিল নীল গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ও আকাশি রঙের টি-শার্ট। মুখমণ্ডল ও ডান হাতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পিবিআই ও সিআইডি টিম মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করছে। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রূপসা সেতুর ২ নম্বর পিলারের নিচ থেকে পুলিশ সাংবাদিক বুলুর লাশ উদ্ধার করে। স্বজনদের অনেকে এটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলছেন, আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার প্ররোচনার ঘটনা উল্লেখ করছেন। খুলনার সাংবাদিক সমাজ এই রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।

উল্লেখ্য, সাংবাদিকতা জীবনে বুলু প্রথমে দৈনিক বঙ্গবাণী পত্রিকায় যোগ দেন। পরবর্তীতে আজকের কাগজ, চ্যানেল ওয়ান, ইউএনবি, দৈনিক প্রবাহসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) ও বিএফইউজের সদস্য ছিলেন।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement