নকল পুতুল-মুদ্রা কাণ্ডে চাঞ্চল্য: পুলিশের ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অডিও ফাঁস

নকল পুতুল-মুদ্রা কাণ্ডে চাঞ্চল্য: পুলিশের ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অডিও ফাঁস

ঠাকুরগাঁও: প্রতিনিধি 

Published : ১৮:০১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর তিন দিন পর ফাঁস হয়েছে পুলিশের একটি অডিও কল রেকর্ড।

সেখানে উঠে এসেছে পুলিশের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ।আটক ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে প্রতারক নয়, বরং প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অথচ থানার ওসি ও এসআই মিলে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের  প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছেন।

অডিও রেকর্ডটি  বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই রাণীশংকৈলসহ সারা জেলায় তোলপাড় শুরু হয়। জনমনে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের আস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে।

ফাঁস হওয়া ১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে শোনা যায় তথ্যদাতা আকাশ ও রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথন।

আকাশকে বলতে শোনা যায় –“আমি তো আগে থেকেই জানতাম তারা প্রতারক না, বরং ক্রেতা ছিল। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট হয়েছিল লাখে ৩০ হাজার টাকা আমাকে দেবেন। কিন্তু দেননি। নির্দোষ মানুষদের জেলে পাঠানো হলো কেন?”

 উত্তরে এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন –“হ্যাঁ, তারা আসলেই নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিলেন মামলা না দিতে। তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মামলা দেওয়ার। টাকা ফেরতও দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরাও তখন ছিলেন।”

আকাশ পাল্টা জবাব দেন –“ওরা তো কেউ টাকা ফেরত পায়নি, সবাই জেলে। তাহলে কাকে টাকা ফেরত দিলেন? আমি সোর্স, আমার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট হয়েছে, সেটাও দিলেন না। আর তারা প্রতারক নয়, নির্দোষ মানুষ।”

এমন আরও অর্থ লেনদেন ও ভাগাভাগির আলাপ শোনা যায় অডিওতে।

অডিও ফাঁসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। অনেকেই লিখেছেন,“সরকার পরিবর্তনের পরও প্রশাসনের ভেতরে দুর্নীতির দোসররা বহাল তবিয়তে আছে। সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।”

স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে ওসি আরশেদুল হক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রাণীশংকৈল প্রেসক্লাব সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন –“অডিওতে সাংবাদিকদের নাম টেনে আনা হয়েছে, যা মিথ্যা। আমি নিজে ছবি তুলেছি, তখন টাকার প্রসঙ্গ আসেনি। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা অবাক হয়েছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কখনো আপোস করবে না।”

এসআই শহিদুল ইসলাম কল রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করে বলেন –“ওসি স্যারের নির্দেশেই আকাশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত দায় নেই।”

রাণীশংকৈল সার্কেল এএসপি শ্নেহাষীশ কুমার দাস জানান –“ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়েছি। তদন্ত চলছে, দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না।”

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন–“ঘটনা নজরে এসেছে। তদন্ত করে প্রমাণ মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য,গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে রাণীশংকৈল থানার পুলিশ নকল সোনার পুতুল, পুরোনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তখন থানার ওসি আরশেদুল হক দাবি করেছিলেন, আসামীরা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু অডিও ফাঁস হওয়ার পর পুরো ঘটনার মোড় ঘুরে গেছে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement