প্রার্থী এক আসনে সর্বাধিক ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন

Published : ১৩:১৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট প্রচারে এবার পোস্টার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অন্য কোনো উপাদান দিয়ে তৈরি লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন বা ব্যানারও ব্যবহার করা যাবে না। একই সঙ্গে বিলবোর্ডের ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে; একজন প্রার্থী এক সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন। এইসব নির্দেশনা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা নির্বাচন কমিশন (ইসি) চূড়ান্ত করেছে।
গত মঙ্গলবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাবের সঙ্গে প্রেরণ করা হয়েছে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫। তবে আরপিওর মতো আচরণ বিধিমালার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন বাধ্যতামূলক নয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর ইসি গেজেট আকারে এ বিধিমালা জারি করতে পারবে।
নতুন আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের সময় ইসি খসড়ায় দল ও সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছিল। অনেক দল প্রার্থীদের সাদাকালো পোস্টারে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করলেও ইসি তা অনুমোদন করেনি। পরিবেশবান্ধব প্রচারণা নিশ্চিত করতে রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোট প্রচারে পোস্টার ব্যবহার বন্ধের প্রস্তাব নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে এসেছে, যা ইসি মেনে নিয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, “বিলবোর্ডের ব্যবহার এবার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তবে সীমিত করা হয়েছে যাতে জনসাধারণ বা যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে।”
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, বিলবোর্ডের অংশের সর্বোচ্চ আয়তন ১৬/৯ ফুট হবে। বিলবোর্ড স্থাপন করার ফলে পরিবেশ বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তা নিষিদ্ধ। এক প্রার্থী সর্বাধিক ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন। এর যুক্তি হলো, বিলবোর্ড তৈরিতে ব্যয় বেশি হওয়া এবং প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো।
আরপিওর সংশোধনী অনুযায়ী ডিজিটাল বিলবোর্ডে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে, তবে আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময়কাল তিন সপ্তাহ নির্ধারণ করা হয়েছে। সব প্রার্থী এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী ইশতেহার বা ঘোষণাপত্র পাঠ করতে পারবেন। গণমাধ্যমের নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিতে পারবেন প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধি, তবে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
প্রচার চলাকালীন ভিভিআইপি তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সাংবিধানিক পদে থাকা কর্মকর্তারা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সরকারি সুবিধা যেমন– সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা অনুরূপ যন্ত্র ব্যবহারও নির্বাচনী প্রচারে নিষিদ্ধ। হেলিকপ্টার ব্যবহার শুধুমাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা করতে পারবেন, তবে এর মাধ্যমে কোনো প্রচারসামগ্রী বিতরণ বা ঝোলানো যাবে না।
ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটার সীমার মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ নিষিদ্ধ। ভোটার স্লিপের আয়তন সর্বোচ্চ ১২ সেন্টিমিটার × ৮ সেন্টিমিটার হবে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদিতে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। মাইকে প্রচারের শব্দ সর্বাধিক ৬০ ডেসিবেল এবং সময়কাল দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে কোনো কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্যান্য গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণ্য বা উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। আইন লঙ্ঘন করলে প্রার্থী, রাজনৈতিক দল এবং গণমাধ্যম শাস্তির মুখোমুখি হবে।
প্রার্থী বা দলের সামাজিক মাধ্যমের সব তথ্য প্রচার শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম প্রচারণাও নিষিদ্ধ।
প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্য পদে থাকলে পদত্যাগ বাধ্যতামূলক। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারাদণ্ডের বিধান ছয় মাস পর্যন্ত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নারীদের সাইবার বুলিং প্রতিরোধ ও বিদেশে কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে সশরীরে প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
BD/AN