চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান দুই হাজার কোটি টাকা

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান দুই হাজার কোটি টাকা ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:৪৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ঋণের বোঝায় মারাত্মক সংকটে। জুন ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার কোটি টাকার বেশি পৌঁছেছে। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ গ্রাহকের কাছেই আটকে আছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এই গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যাংকের কার্যক্রম প্রায় ব্যর্থ।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। দুর্বল আদায়ের কারণে ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণ ৯৪,৯৯০ কোটি টাকা, যার ৭৫.৯১ শতাংশ খেলাপি। এসব ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য ৬৬,৯৫২ কোটি টাকা। শীর্ষ ২০ গ্রাহকের কাছ থেকে জানুয়ারি-জুনে নগদ আদায় হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অন্যান্য খেলাপি গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় হয়েছে ২৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক খেলাপি ঋণ থেকে মোট ২৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আদায় করতে পেরেছে।

জুনে ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে ১,১৮,৬২৪ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ১,০৯,২০৬ কোটি টাকা ছিল। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ আমলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জনতা ব্যাংকে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। শীর্ষ সুবিধাভোগী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অনেকেই দেশ ছেড়ে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে শীর্ষ ২০ গ্রাহকের ঋণ আদায় কার্যক্রম প্রায় থেমে গেছে।

শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, রানাকা গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ, রিমেক্স ফুটওয়্যার, শিকদার গ্রুপ, জনকণ্ঠ গ্রুপ, লিথুন ফ্যাব্রিক্স, হাবিব হোটেল, লেক্সকো লিমিটেড, চৌধুরী গ্রুপ, আনন্দ শিপইয়ার্ড, বিআর শিপিং মিলস, ঢাকা নর্থ পাওয়ার, ইব্রাহিম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ডেল্টা কম্পোজিট ও আদিল করপোরেশন।

খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জুন শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৬,৯৫৭ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ১৩,০৬০ কোটি টাকা ছিল। বিশাল ঘাটতির কারণে ব্যাংকের মূলধন ঋণাত্মক হয়ে ১৭,০২৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে মূলধন ঋণাত্মক ছিল ১০,৭৫৭ কোটি টাকা।

নিট সুদের আয় কমে যাওয়ায় ২০২৪ সালে ব্যাংক ব্যাপক লোকসানে পড়েছে। গত বছর লোকসান ছিল ৩,০৭০ কোটি টাকা, এর আগের বছর মুনাফা ছিল মাত্র ৬২ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান হয়েছে ২,০৭১ কোটি টাকা।

শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, “শুধু আমাদেরই নয়, প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে টাকা আদায়ের চিত্র একই। আমরা যতভাবে সম্ভব অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছি এবং প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement