সহমর্মিতা আর পরিবর্তনের গল্পের অগ্রদূত অস্ট্রেলিয়ায় VAAUS কমিউনিটি

সহমর্মিতা আর পরিবর্তনের গল্পের অগ্রদূত অস্ট্রেলিয়ায় VAAUS কমিউনিটি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:৪৮, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

মনিটরের হালকা বিপ বিপ শব্দ ছাড়া লেবার রুমটি ছিল একবারে নীরব। নিজ ঘর থেকে দূরে ভীত, নির্যাতিত এক গর্ভবতী তরুণী যার হাত ধরে ছিল অজানা কয়েকজন নারী।

পরিবার বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে সেই তরুণীর সহযোগিতায় থাকা সেই নারীরা ছিল ভিকারুননিসা অ্যালামনাই অস্ট্রেলিয়া (VAAUS) এর সদস্যরা। যা গঠিত হয়েছিল ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন কিছু ছাত্রীদের নিয়ে। 

কোভিড-১৯ প্যানডামিকের সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছিল VAAUS এর মমতাময়ী নারীরা। তারাই তার পরিবার হয়ে উঠেছিল আর প্রয়োজনে পাশে ছিল আশ্রয় খুঁজে দেওয়া থেকে যত্ন পুরোটা সময় জুড়ে।

এই মমতা দেখায় VAAUS শুধুমাত্র প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন নয় একটি শক্তিশালী মানবিক উত্তরণ যা নারীসমাজের বন্ধনকে করেছে উদ্দেশ্য আর ছড়িয়ে দিচ্ছে আশা, শক্তি আর গর্বের আলো যেন ছুঁয়ে দেয় সমাজকে।  
স্কুলের স্মৃতি থেকে পরিবর্তনের আন্দোলন।

২০১৬ সালের অক্টোবরে, সিডনির এক রেস্টুরেন্টে ভিকারুননিসা অ্যালামনাই এর পুনর্মিলনে কয়েকজন নারী চিন্তা করেন কীভাবে তাদের এই শিকড়ের টানকে ভালোর শক্তিতে পরিণত করা যায়।

যা দ্রুত হৃদয় ও সৃতির মিলে পরিণত হয়েছিল এক বড় ভিশনে। ২০১৭ সালের মার্চে, এই ভিশন বাস্তবে রূপ নেয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় ভিকারুননিসা অ্যালামনাই অস্ট্রেলিয়া (VAAUS), একটি প্ল্যাটফর্ম যেটা তৈরি হয়েছে নারীবন্ধন, উদ্দেশ্য আর সমাজকে ভালো কিছু দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে। 

ডাঃ ইফাত আঞ্জুম, ডাঃ ফারিজা সাবরিনা, ফাদিয়া তাসনিম, ডাঃ সুরঞ্জনা জেনিফার রহমান এবং তাসরিনা নাহিদ তন্নী মিলে প্রতিষ্ঠা করেন VAAUS। একটি সংগঠন যার উদ্দেশ্য ছিল শিকড়ের এই বন্ধনকে সমাজসেবার শক্তিতে পরিণত করা।

পরবর্তীতে ডাঃ মাহবুবা খানম মুক্তা ও ডাঃ সুরঞ্জনা জেনিফার রহমান এর নেতৃতে সংগঠনটির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ট্রেলিয়ান চ্যাঁরিটিজ ও নট-ফর-প্রফিটস কমিশন (এসিএনসি) এ নিবন্ধিত হয় এবং ডিডাকটিবেল গিফট রিসিপেন্ট (ডিজিআর) স্বীকৃতি অর্জন করে । ফলে এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে। 

সাত বছরের সাফল্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে VAAUS অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি রাজ্য ও অঞ্চলে নারী, শিশু ও পরিবারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মর্যাদা রক্ষায় ১২ টি সংগঠনকে ৪২,০০০ ডলার সহায়তা করেছে।  

বছরের পর বছর VAAUS এর অগণিত সহায়তা অস্ট্রেলিয়ায় সহমর্মিতার বার্তা ছড়িয়েছে। ২০২২ সালে কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের ভয়াবহ বন্যায় তারা তৎক্ষণাৎ রেড ক্রসের মাধ্যমে ত্রাণ পাঠায়। তারা “ শেয়ার দি ডিগনিটি” এর সাথে মিলে সঙ্কটে থাকা নারীদের প্রয়োজনে হাইজিন সাপ্লাইস সরবরাহ করে।

অ্যাডিলেডে “লিটল হিরোস ফাউন্ডেশন” এর জন্য দাতব্য ডিনার আয়োজন করে অসুস্থ শিশুদের সাহায্যে তহবিল সংগ্রহ করেছে। পার্থে “কিডস রিসার্চ ইন্সটিটিউট” এর জন্যও অর্থ সহায়তা দেয় শিশুস্বাস্থ্য গবেষণায়। এগুলো VAAUS এর অসংখ্য কাজের একটা অংশবিশেষ যেখানে তাদের সকল কার্যক্রমই সহমর্মিতাকে কাজে রূপ দেয়ার অনন্য উদাহরণ।

 অস্ট্রেলিয়ার সীমানা পেরিয়ে VAAUS বাংলাদেশে “ এইম ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশন” এর সাথে অংশীদারিত্বে অসহায় শিশুদের শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। দুটি দেশকে যুক্ত করেছে মানবিকতার বন্ধনে।

 গল্পের মোড় ২০২৫ঃ নতুন অধ্যায়/ “চেঞ্জ দি স্টোরি”

২০২৫ সালের ৯ নভেম্বর, সিডনির ল্যান্টানা ভেন্যুস এ অনুষ্ঠিত হবে VAAUS গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫, যেখানে যোগ দেবেন এক হাজারেরও বেশি অথিতি তাদের মধ্যে ৩৫০ জনেরও বেশি প্রাক্তন ভিকারুননিসার শিক্ষার্থী। এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন হবে তাদের নতুন উদ্যোগঃ “চেঞ্জ দি স্টোরি”, যার লক্ষ্য পারিবারিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি, সহানুভূতি জাগানো ও সমাজকে সম্পৃক্ত করা।   

VAAUS বিশ্বাস করে পরিবর্তন শুরু হয় যখন নীরবতা ভাঙে, আর মানুষ একসাথে কথা বলতে শেখে। বিশেষ করে  পুরুষরা যখন নিরাপদ সমাজ গঠনে সহযোগী হয়।

এই বছরের উদ্যোগে তারা সমর্থন করছে “আলো এনলাইটেড ওমেন” এবং “কালচারাল ডাইভারসিটি নেটওয়ার্ক ইনক.(সিডিএনআই)” দুটি সংগঠন যারা বিভিন্ন পটভূমির নারী ও অভিবাসী নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করে। বাংলাদেশ থেকেও অনুষ্ঠানে আসছেন অথিতিরা, তাদের মধ্যে রয়েছেন ভিকারুননিসা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ব্যারিস্টার ইফাত গিয়াস আরেফিন, যিনি বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। 

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রসংশা করে বলেন, “আমাদের মেয়েরা যেখানে যায়, সেখানেই মানবতার আলো ছড়ায়। তাদের দেখে গর্ব হয়- কারণ শিক্ষা আর মমতা যখন  একসাথে কাজ করে, তখন তা সব সীমা পেরিয়ে সত্যিকারের পরিবর্তন আনে।”

VAAUS এর “চেঞ্জ দি স্টোরি” উদ্যোগকে সহায়তা করছে টাইটেল স্পন্সর “এআইএস মেরিন ইনভেটসমেন্টস” যারা সমাজকল্যাণ ও টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

VAAUS এর বিশেষত্ব শুধু তাদের কাজেই নয় বরং তাদের মানবিক অবস্থানে। একটি বন্ধন, মমতা ও উদ্দেশ্যের সংমিশ্রণ। প্যানডামিকের সময় এক অসহায় মায়ের পাশে দাড়িয়ে VAAUS প্রমাণ করেছে ঢাকার এক ক্লাসরুমে জন্ম নেওয়া বন্ধন সীমান্ত পেরিয়েও পরিবর্তন আনতে পারে।

আজ VAAUS কাজ করছে পারিবারিক সহিংসতা বিরোধী সচেতনতা, পরামর্শ ও মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে। তারা দেখিয়েছে ভিকি হওয়া মানে মমতার ঐতিহ্য বহন করা আর সেবা ও মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দেওয়া- যার কোন সীমানা নেই। 

“VAAUS গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫” ও “চেঞ্জ দি স্টোরি” উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন : www.vaaus.org.

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement