"প্যালেস্টাইন অ্যাকশন" গ্রুপের পক্ষে বিক্ষোভকালে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার ৩৬৫

Published : ১২:৪৫, ১০ আগস্ট ২০২৫
ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নামের একটি সংগঠনকে সমর্থন জানানোর কারণে অন্তত ৪৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মাসে সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য সরকার।
শনিবার (৯ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ৯টার মধ্যে লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ার থেকে এসব গ্রেপ্তার হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ সমর্থনের কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে এক পোস্টে তারা জানায়, ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন জানাবে, সময় লাগলেও আমরা যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করব।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে বসে থাকা বিক্ষোভকারীদের ব্যানার হাতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ। একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল— ‘আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি, আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি’।
প্রতিবাদ আয়োজনকারী ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিজ’ গ্রুপ এক্সে লিখেছে, ‘মানুষ গাজায় গণহত্যা ও প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করছে।’
সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে একাধিক বিক্ষোভে এ পর্যন্ত শত শত মানুষকে আটক করা হয়েছে। সমালোচকদের অভিযোগ, এই নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতায় আঘাত এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা।
২০০০ সালের সন্ত্রাসবাদ আইনে এই সংগঠনের সদস্য হওয়া বা সমর্থন জানানো এখন অপরাধ, যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড।
আল জাজিরার সাংবাদিক সোনিয়া গালেগো জানান, গ্রেপ্তার বা শাস্তির হুমকি সমর্থকদের দমাতে পারেনি। তার ভাষায়, ‘শুধু একটি টি-শার্টে “আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি” লেখা থাকলেও বা কাগজে এটি লিখে হাতে ধরলেও গ্রেপ্তার হতে পারে।’
বিক্ষোভকারী প্যাডি ফ্রেন্ড বলেন, ‘যদি আমরা সাতটি শব্দের একটি সাইন নিয়ে চুপচাপ বসতে না পারি, তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মানে কী?’ অন্যদিকে পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া এক বিক্ষোভকারী, নানী মানজি ম্যান্সফিল্ড আবারও মাঠে নেমে বলেন, ‘এটা সেই ব্রিটেন নয় যেখানে আমি বড় হয়েছি। আমরা যেন এক ভিন্ন বাস্তবতায় বাস করছি, যা আমি মেনে নেব না।’
গত জুলাই থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ২০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যেই ৩৫০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক একাডেমিক এক খোলা চিঠিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ‘সম্মিলিত প্রতিরোধ অভিযানে’ সমর্থন জানিয়েছেন।
ইতিহাসবিদ ইলান পাপে, অধ্যাপক এয়াল ওয়েইজম্যান, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ মাইকেল হার্ট ও জ্যাকলিন রোজসহ অনেকে চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
শনিবার লন্ডনে ‘প্যালেস্টাইন কোয়ালিশন’ আয়োজিত আরেকটি মিছিল থেকেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তার হাতে ছিল প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সমর্থনকারী একটি ব্যানার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্য বলেছে, শুধুমাত্র ব্যানার বা সাইনবোর্ড হাতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার কারণে গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। লেবার পার্টির এমপি জন ম্যাকডোনেলও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা লজ্জাজনক।’
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে ইসরায়েল-সংযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, প্রবেশপথ অবরোধ, লাল রঙ ছিটানো ও যন্ত্রপাতি নষ্ট করে আসছে। সংগঠনের অভিযোগ, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্য সরকার জড়িত।
গত জুনে তারা একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ঢুকে দুটি এয়ারবাস ভয়েজার বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা আকাশে জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহৃত হয়।
সংগঠনের মুখপাত্র মানাল সিদ্দিকি আল জাজিরাকে বলেন, এই বিমানগুলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহৃত হতে পারে। তাদের দাবি, ব্রিজ নর্টন ঘাঁটি থেকে বিমানগুলো সাইপ্রাসে ব্রিটিশ বিমানঘাঁটিতে যায় এবং সেখান থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের মিশনে অংশ নেয়।
তথ্যঃ বিবিসি ও রয়টার্স