কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তে নতুন এক অদ্ভুত ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, থাইল্যান্ড সীমান্ত এলাকায় ‘ভূতুড়ে শব্দ’ সম্প্রচার করে প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়াকে মানসিকভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
এই গুরুতর অভিযোগ করেছেন কম্বোডিয়ার প্রভাবশালী রাজনীতিক, সিনেট প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। তিনি বলেছেন, থাইল্যান্ড তাদের যৌথ সীমান্তে রাতভর ভয়ঙ্কর শব্দ সম্প্রচার করছে, যা এক ধরনের মানসিক নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। হুন সেন জাতিসংঘের কাছে এই কর্মকাণ্ডের জরুরি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
তার নির্দেশে কম্বোডিয়ার মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, থাই সেনারা সীমান্ত এলাকায় স্থাপন করা লাউডস্পিকার দিয়ে রাতের অন্ধকারে 'ভূতের আর্তনাদ, শিশুদের কান্না, শেকলের আওয়াজ ও অন্যান্য আতঙ্ক সৃষ্টিকারী শব্দ' বাজাচ্ছে।
কমিশনের দাবি, এই ‘অমানবিক’ প্রচারণা সীমান্তবাসীর ঘুম, মানসিক শান্তি ও দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করছে। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর থেকে এ ধরনের শব্দ সম্প্রচার চলছে, যা সীমান্তে বসবাসরত সাধারণ মানুষদের মধ্যে ভয় ও অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মানবাধিকার কমিশন সতর্ক করেছে যে, এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ড উল্টো অভিযোগ করেছে যে কম্বোডিয়া নাকি সীমান্তে নতুন করে স্থলমাইন পুঁতছে। তাদের দাবি, এসব মাইন বিস্ফোরণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তত ছয়জন থাই সেনা আহত হয়েছেন। তবে কম্বোডিয়া পাল্টা জানিয়েছে, এগুলো পুরোনো যুদ্ধকালীন মাইন, যা বহু বছর আগেই পোঁতা হয়েছিল।
থাই কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাই মাসেই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত চরমে পৌঁছেছিল। সেই সংঘর্ষে অন্তত ৩৮ জন নিহত এবং প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। পরে মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি জরুরি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে দুই দেশের নেতাদের ফোন করে সতর্ক করেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে বাণিজ্য আলোচনাও স্থগিত করে দেওয়া হবে।
অতীতের সেই উত্তেজনা আবারও ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, আর এইবার কারণ—‘ভূতের শব্দের যুদ্ধ’।