ট্রাম্পের ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতের রপ্তানি খাত

ট্রাম্পের ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতের রপ্তানি খাত ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০০:৫৪, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধসের মুখে পড়েছে ভারত। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ভারতের রপ্তানি খাতে,

বিশেষত তাদের সবচেয়ে বড় বিদেশি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে। টানা চার মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। শুধু গত সেপ্টেম্বর মাসেই এই পতনের হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বিবিসি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির হিসাব অনুযায়ী, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি আয় ছিল ৮৮০ কোটি ডলার, যা সেপ্টেম্বর নাগাদ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫৫০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

মূলত, গত ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ৫০ শতাংশ শুল্ক নীতি ভারতের রপ্তানিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার কারণে দিল্লির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করে ওয়াশিংটন। সেপ্টেম্বর মাসে এর পূর্ণ প্রভাব দেখা দেয় ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে।

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)–এর নির্বাহী পরিচালক অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “শুল্ক বৃদ্ধির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি বাজারে পরিণত হয়েছে।”

বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, যা আগামী মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জিটিআরআইয়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই শুল্কারোপের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে ভারতের শ্রমনির্ভর খাতগুলোতে। বিশেষ করে বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, প্রকৌশল পণ্য এবং রাসায়নিক শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

রপ্তানি হ্রাসের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিতে, যা সেপ্টেম্বর মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১৫ কোটি ডলারে—এটি গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কিছুটা বাড়ায় সামগ্রিক ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কয়েক মাস ধরে স্থগিত থাকা আলোচনার পর গত মাসে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সংলাপ আবারও শুরু হয়েছে। এই সংলাপের অংশ হিসেবে একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে।

বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বক্তব্যে দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর কৌশলের অংশ হিসেবে ক্রেমলিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে চায়।

তবে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলমান এবং দুই দেশই জ্বালানি সহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে আগ্রহী।

বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, বিশেষ করে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে ভারতের কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে চায়, কারণ এটি তাদের জন্য বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। কিন্তু ভারত বরাবরই খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকদের জীবিকা ও ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থরক্ষার কথা উল্লেখ করে এই খাতকে সুরক্ষিত রেখেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তখন দাঁড়ায় ১৯০ বিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্প ও মোদি উভয়েই এই অঙ্ককে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যা বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement