মঙ্গলেও বজ্রপাতের আভাস

মঙ্গলেও বজ্রপাতের আভাস ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০১:১০, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে বিস্তৃত লাল ধুলোর নিঃসঙ্গ গ্রহ—মঙ্গল। বহু দশক ধরে বিজ্ঞানীরা সেখানে জীবনের ক্ষুদ্রতম চিহ্ন খুঁজে বেড়ালেও এবার তারা আরও ভিন্নধর্মী এক ইঙ্গিত পেয়েছেন।

জীবনের অস্তিত্ব নয়, বরং মঙ্গলের আকাশমণ্ডল থেকেই ধরা পড়েছে এক রহস্যময় শব্দ, যা ইঙ্গিত করছে সম্ভবত সেই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক সক্রিয়তা বা বজ্রপাতের উপস্থিতি।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই আবিষ্কার বাস্তব হলে মঙ্গল গ্রহকেও পৃথিবী, শনি ও বৃহস্পতির মতো বৈদ্যুতিক কার্যক্রমসমৃদ্ধ গ্রহের তালিকায় যুক্ত করা যায়। তথ্যটি জানিয়েছে বিবিসি।

২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভারকে মূলত মঙ্গলে অতীত বা বর্তমান জীবনের সম্ভাব্য প্রমাণ অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জেজেরো ক্রেটারে অনুসন্ধান চালানোর সময় রোভারের সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং থেকে ধরা পড়ে ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক নির্গমনের সিগন্যাল, যা গবেষকেরা ‘মিনি লাইটনিং’ নামে অভিহিত করেছেন।

ফ্রান্সের বিজ্ঞানীদের একটি দল রোভার সংগৃহীত মোট ২৮ ঘণ্টা অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এই ধরনের বৈদ্যুতিক বিকিরণ সাধারণত ডাস্ট ডেভিল বা মঙ্গলীয় ধূলিঝড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ডাস্ট ডেভিল হলো ছোট হওয়ার পরও ভীষণ সক্রিয় ঘূর্ণিঝড়, যা ভূমির গরম বাতাস দ্রুত উপরে উঠলে তৈরি হয়। ঘূর্ণনের ফলে কণাগুলোর ঘর্ষণে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হতে পারে, যেটিই সম্ভবত এসব শব্দের উৎস।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. ব্যাপতিস্ত শিদে রয়টার্সকে বলেন, এই আবিষ্কার মঙ্গলের আবহবিদ্যা ও পরিবেশগত রসায়ন সম্পর্কে নতুন জানার দ্বার খুলবে। পাশাপাশি এটি ভবিষ্যতে মানুষ বা রোবট পাঠানোর পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এক নিবন্ধে পদার্থবিজ্ঞানী ড. ড্যানিয়েল প্রিচার্ড লিখেছেন, রোভার থেকে পাওয়া রেকর্ডিং বিশ্লেষণে ধূলিকণা–প্রণোদিত বৈদ্যুতিক নির্গমনের শক্তিশালী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এখনো কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—বিশেষ করে নির্গমনগুলো শোনা গেলেও দৃশ্যমান হয়নি, ফলে এটি প্রকৃতপক্ষে বজ্রপাত ছিল কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নতমানের বায়ুমণ্ডলীয় সরঞ্জাম এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা মঙ্গলে পাঠানো হলে এই রহস্য আরও পরিষ্কার হবে। এ ধরনের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি মঙ্গলের জলবায়ু, পরিবেশ এবং সেখানে ভবিষ্যতে মানুষের পদচিহ্ন রাখার সম্ভাবনা সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement