ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে এক বিতর্কিত ও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি হিন্দু দম্পতিদের কেবল একটি সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্তত দুই বা তিন সন্তানের পরিবার গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি তার বার্তা ছিল—তারা যেন সাত-আট সন্তানের পরিবার গঠন না করে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে ভারতে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হিমন্ত শর্মা জানান, রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় জন্মহার অস্বাভাবিকভাবে বেশি, বিপরীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে কম। তিনি সতর্ক করে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় যদি সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধি না করে, তবে ভবিষ্যতে তাদের ঘর ও সম্পদ দেখভাল করার জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি আরও দাবি করেন, আসামের জনমিতি বা জনসংখ্যার ভারসাম্য দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৭ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলমানদের সংখ্যা রাজ্যে ৪০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তিনি স্মরণ করান, তার ছাত্র রাজনীতির সময়ে এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা মাত্র ২১ শতাংশ ছিল, যা ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বেড়ে ৩১ শতাংশে পৌঁছেছিল। হিমন্ত শর্মা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অদূর ভবিষ্যতে ভূমিপুত্র অসমীয়াদের সংখ্যা ৩৫ শতাংশের নিচে নেমে যাবে এবং বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের প্রভাব রাজ্যের সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মাঝে মাঝে দাবি করে, উত্তর-পূর্ব ভারতকে আলাদা করে তাদের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, এ ক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রয়োজন নেই; যদি জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ অতিক্রম করে, তা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যাবে।
উল্লেখযোগ্য হলো, হিমন্ত শর্মা তার বক্তব্যে বিরোধী দল কংগ্রেসকেও একহাত নেন। তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের ভেতরে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ৪৮টি আসন সংরক্ষণের দাবি উঠেছে এবং দলটি পুরোপুরি সংখ্যালঘু ভোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রেক্ষাপট তুলে ধরার মাধ্যমে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।


































