১৩ অক্টোবর: বিশ্ব ব্যর্থতা দিবস আজ

Published : ১২:১৯, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ভাবুন তো, আপনি নতুন কোনো কিছু শুরু করেছেন, হয়তো একটি প্রজেক্ট, কোনো উদ্যোগ, বা এমন কিছু যা আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোনের বাইরে বের করে এনেছিল।
কিন্তু ফলাফল হলো আপনার প্রত্যাশার ঠিক উল্টো। চেষ্টা সত্ত্বেও সেই উদ্যোগ সফল হলো না। ব্যর্থ হলেন। তারপর আপনি কী করলেন? নিজেকে দোষারোপ করলেন? বললেন, “আমার দ্বারা সম্ভব নয়”?
যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে আজকের দিনটি ঠিক আপনার জন্য। ১৩ অক্টোবর, বিশ্ব ব্যর্থতা দিবস। এটি একটি বিশেষ দিন, যখন ব্যর্থতাকে দুর্বলতার নয়, বরং সাহসিকতার চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ব্যর্থ হওয়া মানে থেমে যাওয়া নয়; বরং আপনি সাহস করে চেষ্টা করেছেন, সেটাই মূল বিষয়। ব্যর্থতা হলো শেখার প্রক্রিয়ার শুরু, এবং আমাদের যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিশ্ব ব্যর্থতা দিবসের শুরু হয় ২০১০ সালে ফিনল্যান্ডের Aalto বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রীর উদ্যোগে। তারা লক্ষ্য করেছিল, অনেকেই নতুন কিছু শুরু করতে ভয় পাচ্ছে, কারণ ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা তাদের আগ্রহ আটকে দিচ্ছে।
তখন তারা ভাবল, ব্যর্থতা নিয়ে যদি খোলাখুলি আলোচনা করা যায়, যদি এটিকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তাহলে মানুষ আরও সাহসী হবে এবং নতুন উদ্যোগ নেবে।
এই ভাবনা থেকেই জন্ম নিলো এই বিশেষ দিবস। শুরুটা ছিল ছোট পরিসরে, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই এটি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে শুরু করে বড় প্রতিষ্ঠানও এখন এই দিনটি গুরুত্ব দিয়ে উদযাপন করে।
আমরা সাধারণত ব্যর্থতাকে নেতিবাচক চোখে দেখি, লজ্জার বা হারের সমান কিছু মনে করি। কিন্তু এই দিবসটি সেই ধারণা বদলানোর চেষ্টা করে।
এটি আমাদের শেখায়, ব্যর্থ হওয়া মানে আপনি ব্যর্থ মানুষ নন। বরং আপনি একজন সাহসী মানুষ, যিনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। সাফল্যের গল্পের পেছনে সাধারণত অসংখ্য ভুল, হোঁচট, এবং ব্যর্থতা লুকিয়ে থাকে।
সাফল্যের আগে ব্যর্থ হওয়াই প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক এবং সাধারণ ঘটনা। এই দিবস মানুষকে উৎসাহ দেয়, যাতে তারা তাদের ভুল ও ব্যর্থতার গল্প শেয়ার করে। এতে অন্যরাও বোঝে, আমি একা নই; ব্যর্থতা আমাদের সবার জীবনের অংশ।
উদযাপনের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ব্যর্থতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা। আপনি চাইলে বন্ধু, সহকর্মী বা পরিবারদের সঙ্গে আপনার সেই ভুলের গল্প শেয়ার করতে পারেন, যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি শিখেছেন।
অনেকেই মজা করে ‘ফেল ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করে, যেখানে সবাই তাদের সবচেয়ে বড় বা হাস্যকর ব্যর্থতার গল্প শোনায়। এতে হাসি-রসও হয় এবং বোঝাপড়া তৈরি হয় যে, ভুল করা স্বাভাবিক। কেউ ছোট ছোট ওয়ার্কশপ আয়োজন করে, যেখানে নতুন কিছু শেখা হয় ভুলের ভয়ে না পড়ে।
আবার কেউ ‘ফ্লপ ফিল্ম নাইট’ আয়োজন করে, যেখানে বিখ্যাত ব্যর্থ সিনেমা দেখানো হয় এবং আলোচনা হয়—কেন সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে, তারপরও কী শিক্ষা পাওয়া যায়।
জীবনে আমরা সবাই ব্যর্থ হই। কেউ প্রকাশ করে, কেউ চুপচাপ সহ্য করে। কিন্তু আজকের দিনটি বলছে, ভুল করার সাহস উদযাপন করুন। কারণ আপনি চেষ্টা করেছেন, আর সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। হোঁচট খাওয়া মানে আপনি এগোচ্ছিলেন।
থেমে থাকা নয়; আবার উঠে দাঁড়ানোই আসল জয়। বিশ্ব ব্যর্থতা দিবস আমাদের শেখায়, নিজেকে দোষারোপ না করে, নিজের পথচলাকে সম্মান করতে। কারণ ভুলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে গভীর এবং বাস্তব শিক্ষা।
শুভ বিশ্ব ব্যর্থতা দিবস! আজ একটু সাহস করুন, ভুলটি করুন, হাসুন, শিখুন, এবং আবার এগিয়ে চলুন।
বিডি/এএন