প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক থেকে উধাও হাদির কবিতা: কী ঘটেছে
Published : ২০:০৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান হাদি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম জিজ্ঞাসাবাদে মামলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন—এমন দাবি করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
দুই দফায় মোট আট দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ, আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট রিপন হোসেন সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই রুকনুজ্জামান আদালতকে জানান, রিমান্ড শেষে দাখিল করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—গ্রেপ্তার হওয়া সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই তথ্যগুলোর বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, এই দুই আসামি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় একটি মানবপাচার ও অবৈধ পণ্য চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ফিলিপ নামের এক ব্যক্তির সহযোগী। তারা পরস্পর চাচাতো ভাই এবং সীমান্তপথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করার কাজে যুক্ত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার প্রধান পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীরা ভারতে পালিয়ে থাকলে, সেই পলায়নে সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া এই দুই আসামি কৌশলে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন।
এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর সীমান্ত এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে বিজিবি সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে আটক করে। পরে ১৮ ডিসেম্বর তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এরপর ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে আহত শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর মামলাটিতে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা যুক্ত করা হয়।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির, মা মোসা. হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল এবং তার সহযোগী মো. কবির। এছাড়া পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিবিউন দিউ, সঞ্জয় চিসিম ও আমিনুল ইসলাম রাজুকে।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসা শরীফ ওসমান হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন হাদি। মোটরসাইকেলযোগে আসা দুর্বৃত্তরা তার মাথায় গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিডি/এএন

































