গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা চাঁদাবাজিজনিত: সরকার

গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা চাঁদাবাজিজনিত: সরকার ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০৩:৩২, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় বুধবার রাতে সংঘটিত এক গণপিটুনির ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে যেভাবে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত ও পুলিশের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ঘটনাকে কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাংশায় ঘটে যাওয়া এই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী তথ্য ছড়ানো সরকারের নজরে এসেছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশি তথ্য ও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এটি পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ফল নয়। বরং এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির ফল।

নিহত ব্যক্তি অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যেই তিনি ওই এলাকায় উপস্থিত হন এবং এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সেই সংঘর্ষের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে।

সরকার জানায়, নিহত ব্যক্তি এর আগেও ২০২৩ সালে দায়ের হওয়া হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন এবং এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি ছিল।

পুলিশের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ঘটনাস্থল থেকে নিহত সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার কোনো অবস্থাতেই আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা যে কোনো ধরনের সহিংসতা সমর্থন করে না।

এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলেও জানানো হয়।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সরকার স্পষ্টভাবে বলেছে, এই ধরনের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

বিবৃতিতে সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য বা তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

সবশেষে সরকার পুনর্ব্যক্ত করে জানায়, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এবং দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার যে কোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরভাবে দমন করবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement