বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক নীতি নিয়ে বিস্তারিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হয়।
সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে—আপনার নিজের সেই সন্দেহ এখনো আছে কি?”
তারেক রহমান জবাবে বলেন, “যখন আমি এ মন্তব্যটি করেছিলাম, তখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি বা রোডম্যাপ দেয়নি। তাই শুধু আমার নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।
তবে পরবর্তীতে যখন ড. ইউনূস নির্বাচন ঘিরে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন এবং বারবার তার অবস্থান স্পষ্ট করলেন, তখন ধীরে ধীরে সেই সন্দেহ দূর হতে শুরু করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “যতদিন অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ঘোষিত বক্তব্যে ও কর্মকাণ্ডে দৃঢ় থাকবে, ততদিন মানুষের আস্থা তাদের প্রতি আরও বাড়বে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা ব্যক্তিগত নয়, রাজনৈতিক বিষয়। আমরা চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। তাদের মূল দায়িত্ব হলো প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা আশা করি, তারা সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।”
তারেক রহমান বলেন, “আমরা চাই তারা সুন্দরভাবে কাজটি সম্পন্ন করুক। সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা নির্ভর করবে তারা কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই কাজটি করতে পারেন তার ওপর।”
সরকার পরিচালনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার তো একটি স্বল্পমেয়াদি কাঠামো। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশ পরিচালনা করা সহজ নয়। ইউকের জনসংখ্যা যেখানে প্রায় সাত কোটি, সেখানে বাংলাদেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষ। সুতরাং এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজন, যা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেষ্টা করছে। সবক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব নয়, তবে তারা কিছু ইতিবাচক প্রচেষ্টা নিয়েছেন।”
২০০৭ সালের এক এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার নিয়ে মত দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, “এক কথায়, সেটা ছিল একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ সরকার। তারা দেশের রাজনৈতিক ভিত্তি ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল, গণতন্ত্রকে রুদ্ধ করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের একই ধারার আরেক সংস্করণকে আমরা ‘ইন দ্য নেম অব ডেমোক্রেসি’-র নামে দেখতে পেয়েছি।”
কূটনীতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “বিএনপির মূলনীতি একটাই—সবার আগে বাংলাদেশ। আমাদের জনগণ, আমাদের সার্বভৌমত্বই সবার উপরে। বৈশ্বিক প্রভাব থাকুক বা না থাকুক, আমাদের সিদ্ধান্ত হবে দেশের স্বার্থে। সোজা কথা—সবার আগে বাংলাদেশ, এটাকে জটিল করার কিছু নেই।”