রাজনৈতিক ভাষ্যে সংযম ও পরিমিতি প্রকাশ: মাসুদ কামাল

Published : ০০:৩৫, ৭ অক্টোবর ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি সাক্ষাৎকার আজ সকালেই বিবিসি বাংলায় সম্প্রচারিত হয়েছে। এটি ছিল আংশিক সম্প্রচারিত অংশ; বাকি অংশ আগামীকাল প্রচারিত হবে।
সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল তার ইউটিউব চ্যানেলে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, “এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং দার্শনিক এবং নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করে।"
মাসুদ কামাল বলেন, “তারেক রহমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তার মন্তব্য – ‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ’। এখানে তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, আন্দোলনের পেছনে কোনো একক নেতা নয়, জনগণই মূল চালিকা শক্তি।"
ডাকসু রাজনীতি প্রসঙ্গে তার বক্তব্যের বিশ্লেষণে মাসুদ কামাল বলেন, “তারেক রহমান বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না। আমি এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত। তবে ইতিহাসে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে; যেমন ১৯৯১ সালের ডাকসু নির্বাচনে আমান খোকনের জয় তরুণ ভোটারদের সমর্থনের কারণে বিএনপির পক্ষে প্রভাব ফেলেছিল। ২০০১ সালেও তাদের ভোট বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।"
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্যের বর্ণনা দিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, “তার বক্তব্য ছিল অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার, পরিমিত ও সংযত। ১৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, পরিবার, স্মৃতি ও নির্যাতন তিনি সংযমী ভাষায় তুলে ধরেছেন। কোনো ক্রোধ নেই, আছে মমতা ও পরিমিতি বোধ। আমি যখন এটি শুনলাম, চোখে পানি চলে এলো।"
তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তারেক রহমান ব্যক্তিগত প্রতিশোধের কথা বলেননি। বলেছেন, ‘সমস্ত অপরাধের বিচার হতে হবে, তবে এটি প্রতিশোধের নয়, এটি ন্যায়ের প্রশ্ন।’ এটিই রাষ্ট্রনায়কসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি।”
মাসুদ কামাল উল্লেখ করেন, “তারেক রহমান পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে আওয়ামী লীগের অন্যায় শুধুমাত্র জুলাই মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; গত ১৫ বছরের দুঃশাসনেরও বিচার হওয়া উচিত। ১৭ বছরের এই ইতিহাস তুলে ধরেই তিনি প্রমাণ করেছেন যে বিএনপির আন্দোলন হঠাৎ জন্ম নেয়নি, বরং দীর্ঘকালীন অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছে।"
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তারেক রহমান অত্যন্ত সতর্ক। বলেছেন, ‘যদি দল হিসেবে তারা অন্যায় করে থাকে, তবে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে’। তিনি নিষিদ্ধের কথা বলেননি; বরং আইনের শাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।"
মাসুদ কামাল আরও বলেন, “তারেক রহমান দায়িত্ব জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘যে দল বা ব্যক্তি মানুষ হত্যা করে, খুন-গুম করে, দেশের সম্পদ লুট করে – জনগণ তাদের সমর্থন করবে না’। এখানে তিনি শুধু অন্যায়ের বিচারই চাননি, জনগণকেও নৈতিক বিচারের আসনে বসিয়েছেন।"
দেশে ফেরা প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বলেন, “তারেক রহমান একাধিকবার বলেছেন, ‘আমি খুব শিগগিরই ফিরব, ইনশাআল্লাহ। নির্বাচনের প্রচারণার সময় থাকব।’ এটি বিএনপির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা এবং আশাব্যঞ্জক সংকেত।”
বিডি/এএন