হাদিসহ ৩ জনের ওপর হা/ম/লা/র আগাম তথ্য সরকারকে জানানো হয়েছিল
Published : ১১:৫৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
তবু নেওয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার একদিন পরই রাজধানীতে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এই হামলার ঘটনা আকস্মিক নয়—হাদিসহ অন্তত তিনজন শীর্ষ জুলাই যোদ্ধার ওপর হামলার আগাম ও সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারকে বহু আগেই জানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, শরীফ ওসমান হাদি দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় আগ্রাসন ও আওয়ামী লীগের কথিত দেশবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে টার্গেট কিলিংয়ের তালিকায় ছিলেন। ওই তালিকায় তার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের নামও ছিল।
সেপ্টেম্বরে সরকারকে জানানো হয় স্পর্শকাতর তথ্য
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন আইনজীবীর মাধ্যমে এ সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য প্রথম সামনে আসে। পেশাগত কারণে আন্তর্জাতিক কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ওই আইনজীবীর কাছে হামলার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ছিল। তিনি যথাসময়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের বিষয়টি অবহিত করেন।
শুধু তাই নয়, শরীফ ওসমান হাদি, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদ নিজেরাও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহলের কাছে তাদের জীবনের প্রতি হুমকির বিষয়টি সরাসরি তুলে ধরেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই আইনজীবীও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক দফা বৈঠক করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
সূত্রের দাবি, ওই আইনজীবী সরকারের কাছে হামলার সম্ভাব্য উৎস, পরিকল্পনা ও ঝুঁকির মাত্রা তুলে ধরে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ‘আসন্ন বিপদের’ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।
‘নিরাপত্তা বাড়ালেই সমাধান নয়’এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন,“অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে হামলার তথ্য পেয়ে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়িয়ে এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা বাস্তবসম্মত নয়। “এ ধরনের ব্যবস্থা উন্নত দেশগুলোতে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় তা রাজনীতিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে।”
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় অভিযানের দাবি নির্বাচনের পরিবেশ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,“আমরা সরকারকে বারবার বলেছি—নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কয়েকজন ছিঁচকে চোর ধরার লোক দেখানো অভিযান পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।”
ঢাকায় অবস্থান করছেন তথ্যদাতা আইনজীবী সূত্র জানায়, হামলার তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় এসে সেপ্টেম্বর মাসে হাসনাত আবদুল্লাহ, শরীফ ওসমান হাদি ও ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্টরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে উদ্বেগ জানান।
সরকার পক্ষ থেকে বডিগার্ড বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রস্তাব দেওয়া হলেও মাঠের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় তারা তা গ্রহণ করেননি। বর্তমানে ওই আইনজীবী ঢাকাতেই অবস্থান করছেন।
সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিডি/এএন




























