সাইনাস উপশমের ঘরোয়া উপায় কোন ওষুধ ছাড়াই
Published : ১৮:০৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ঋতু বদলের সময় সর্দি-কাশি হওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু এই সমস্যা যদি বারবার ফিরে আসে বা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে তা অনেক সময় সাইনাসাইটিসে রূপ নেয়, যা সাধারণ সর্দি-কাশির তুলনায় বেশি কষ্টকর ও জটিল।
বিশেষ করে শীতকাল শুরু হলেই সাইনাসের উপসর্গগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঠান্ডা না লাগলেও রাতে শুতে গেলেই নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে অস্বস্তি, সকালে উঠেই একের পর এক হাঁচি, মাথাব্যথা—এসবই সাইনাস সমস্যার পরিচিত লক্ষণ।
ঠান্ডা আবহাওয়া, শুষ্ক বাতাস, বায়ুদূষণ এবং ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শ্বাসনালীর ভেতরে প্রদাহ বাড়ে। নাক, কপাল ও নাকের দু’পাশে থাকা বায়ুগহ্বর বা সাইনাসে যখন অতিরিক্ত মিউকাস জমে যায়, তখন সেখানেই শুরু হয় প্রদাহ। এই জমে থাকা তরলে সহজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করে, ফলে সংক্রমণ ও অ্যালার্জির মাত্রা বেড়ে যায়।
এর ফল হিসেবে দেখা দেয় ঘন ঘন নাক বন্ধ হওয়া, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, মুখমণ্ডলে চাপ অনুভব করা এবং কখনও কখনও শ্বাসকষ্টও।
অনেকেই মনে করেন সাইনাস মানেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া জরুরি, কিন্তু বাস্তবে সব ক্ষেত্রে তা প্রয়োজন হয় না। বরং অকারণে ওষুধ খেলে উল্টো সমস্যা বাড়তে পারে। নাক বা গলায় ব্যথা, অ্যালার্জি বা দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায়েও সাইনাসের কষ্ট অনেকটা কমানো সম্ভব।
সাইনাসের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর একটি হলো গরম পানির ভেপার বা বাষ্প নেওয়া। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শোয়ার আগে কয়েক মিনিট গরম পানির বাষ্প নিলে নাকের ভেতরের জমে থাকা মিউকাস নরম হয় এবং আরাম পাওয়া যায়। সাইনাস বেড়ে গেলে অনেক সময় জ্বর, চোখে ব্যথা বা মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হতে পারে, তাই ঠান্ডা এড়িয়ে চলা জরুরি। বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করা এবং কান ও গলা ঢেকে রাখা উপকারী।
বাড়িতে বসে ‘নেতি’ পদ্ধতিতেও সাইনাস পরিষ্কার করা যায়। ফুটানো পানি ঠান্ডা করে তাতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিন। এই পানি এক নাক দিয়ে টেনে অন্য দিক দিয়ে বা মুখ দিয়ে বের করে দিতে হবে। এতে সাইনাসের ভেতরে জমে থাকা অতিরিক্ত মিউকাস বেরিয়ে যায় এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে।
এই সময় শরীর হাইড্রেট রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি করে পানি ও তরল খাবার খান। তুলসীপাতা দিয়ে বানানো চা, আদা-দারচিনি-লবঙ্গ ফুটিয়ে তৈরি মশলা চা সাইনাসে উপকার দেয়। অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে মৌসুমি সবজি দিয়ে হালকা স্যুপ খেলে আরাম পাওয়া যায়।
সাইনাসের বিরুদ্ধে একটি পরিচিত ঘরোয়া দাওয়াই হলো—এক চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার, আধা চামচ হলুদ, সামান্য আদা কুচি, লেবুর রস, অল্প গোলমরিচ ও তিন-চার কোয়া রসুন একসঙ্গে পানিতে ফুটিয়ে নেওয়া। এই মিশ্রণটি ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে পান করলে অনেকের উপসর্গ কমে। চাইলে স্বাদের জন্য সামান্য মধু যোগ করা যেতে পারে।
তবে একটি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা জরুরি। অনেকেই নাক খোলার জন্য বাজারচলতি নেজাল ড্রপ নিয়মিত ব্যবহার করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ড্রপ টানা তিন দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এতে পরে নাক আরও বেশি বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বিডি/এএন

































