শুভ জন্মদিন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ম্যারাডোনা
Published : ১১:৫৫, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ফুটবলের ঈশ্বর নামে খ্যাত ডিয়েগো ম্যারাডোনার আজ ৬৫তম জন্মদিন। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসের দরিদ্র এলাকা ভিয়া ফায়োরিতায় জন্ম হয় এই মহাতারকার।
ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একটাই—ফুটবল। সেই স্বপ্নই একদিন তাকে পৌঁছে দিয়েছিল বিশ্বের শীর্ষে, ফুটবল নামের মহাকাব্যের এক অবিচ্ছেদ্য চরিত্রে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন ম্যারাডোনা। অল্প সময়েই নিজের মেধা ও অসাধারণ দক্ষতায় জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। ১৯৭৯ সালের জাপান যুব বিশ্বকাপ ছিল তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো অধ্যায়। ১৯ বছরের তরুণ ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় শিরোপা, আর তিনিও হন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়, গোল্ডেন বল জয়ী। তখনই বিশ্ব বুঝেছিল—নতুন এক তারকার জন্ম হয়েছে, যিনি ফুটবলকে দেবত্বের স্তরে নিয়ে যাবেন।
১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেন তিনি। তবে সেবার ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে আগেভাগেই শেষ হয় তার অভিযান। কিন্তু ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপই ম্যারাডোনাকে কিংবদন্তির আসনে বসায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৫১তম মিনিটে করা তার সেই ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল—যা এখনো ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তগুলোর একটি। পরে নিজেই বলেছিলেন, “এটা ছিল ঈশ্বরের হাত, আমার নয়।”
আর কয়েক মিনিট পরই আসে ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গোল—‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’। ৬০ মিটার দূর থেকে বল নিয়ে একে একে ১০ জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, অবিশ্বাস্য এক গোল করেন তিনি। ধারাভাষ্যকার তখন চিৎকার করে উঠেছিলেন—“এটা ফুটবল নয়, এটা কবিতা! এটা শিল্প!” সেই বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেন ম্যারাডোনা, হয়ে ওঠেন ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি।
দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপেও তার জাদু ছড়ায়। ইতালির ক্লাব নাপোলিকে একাই বদলে দেন তিনি। জুভেন্টাস ও এসি মিলানের মতো জায়ান্টদের ভিড়ে নাপোলিকে এনে দেন লিগ ও ইউরোপিয়ান শিরোপা। শহরের গরিব শিশুদের জন্য সহায়তা, সমাজসেবামূলক উদ্যোগ—সব মিলিয়ে নাপোলি শহর ম্যারাডোনাকে দেবতার মর্যাদা দেয়। আজও সেখানে তিনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
তবে জীবনের উজ্জ্বলতার পাশাপাশি ছায়াও ছিল। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আবারও দলকে ফাইনালে তুললেও, পরে ডোপ টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ে নিষিদ্ধ হন ১৫ মাসের জন্য। ১৯৯১ সালে মাদকসহ ধরা পড়া এবং ১৯৯৪ বিশ্বকাপে বহিষ্কৃত হওয়া—সবকিছু মিলিয়ে বিতর্ক তার জীবনের নিত্যসঙ্গী ছিল।
দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৩৪৬ গোল করেছেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন, মেসিদের সঙ্গে পাড়ি দেন ২০১০ বিশ্বকাপে। যদিও জার্মানির কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিতে হয়, তবুও আর্জেন্টিনার ফুটবলে তিনি রেখে গেছেন অনন্য ছাপ—যা পরবর্তীতে মেসির মতো তারকারা বহন করে চলেছেন।
২০২০ সালে জীবনের শেষ জন্মদিনটি পালন করেন হাসপাতালে, আইসোলেশনে। কেউ ভাবেনি, কয়েক সপ্তাহ পরই, ২৫ নভেম্বর, হৃদরোগে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন ফুটবলের এই অমর শিল্পী। দুই বছর পর তার উত্তরসূরি লিওনেল মেসি ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে এনে দেন বিশ্বকাপ—যা হয়তো ম্যারাডোনার আত্মাকেও আনন্দিত করেছে কোথাও না কোথাও।
আজ ডিয়েগো ম্যারাডোনার ৬৫তম জন্মদিনে পৃথিবী স্মরণ করছে এক অনন্য প্রতিভাকে—যিনি শুধু ফুটবল খেলেননি, ফুটবলকে করেছেন শিল্প, করেছেন ভালোবাসার ভাষা। তার পায়ের ছোঁয়ায় জন্মেছিল স্বপ্ন, তার জীবনের লড়াই আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা—ফুটবলের জাদুকর, যার নাম ইতিহাস থেকে কখনো মুছে যাবে না
বিডি/এএন



































