একসময় কোটি ভক্তের কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গর্ব ছিলেন সাকিব আল হাসান। দেশের সবচেয়ে সফল অলরাউন্ডার, অধিনায়ক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা এক তারকা ,
যিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই নায়ক এখন বিতর্কের কেন্দ্রে।
২০২৩ সালে সাকিব রাজনীতিতে যোগ দেন, সরাসরি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবেও অংশ নেন। নির্বাচনের ফলাফল ও সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি সমালোচনা উপেক্ষা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন এই তারকা।
নিজের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার উদ্দেশে সাকিব লিখেছিলেন, “শুভ জন্মদিন, আপা।” এই সংক্ষিপ্ত পোস্টই আলোচনার ঝড় তোলে। সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সাজিব ভূঁইয়া ঘোষণা দেন— সাকিব আর বাংলাদেশ জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন না।
একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটারের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ও পক্ষপাতমূলক অবস্থান তার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে। অনেকে বলছেন, সাকিব নিজের জনপ্রিয়তাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে জনআবেগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। যাদের জন্য তিনি একসময় অনুপ্রেরণার প্রতীক ছিলেন, সেই জনগণের বড় অংশই এখন তার প্রতি আস্থা হারিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে সাকিব যেন সেই সব মানুষের অনুভূতিকে উপহাস করেছেন, যারা বিগত সরকারের সময় দমননীতি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার এই আচরণকে অনেকেই রাজনৈতিক অন্ধ আনুগত্য ও বাস্তবতা অনুধাবনের ঘাটতির প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।
যখন সাকিব আওয়ামী লীগে যোগ দেন, তখন শেখ হাসিনার সরকার ছিল আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর সমালোচনার মুখে। নির্বাচনে জালিয়াতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও দুর্নীতির অভিযোগে সেই সময় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। জাতিসংঘ পর্যন্ত বলেছিল, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে সরকারের ভূমিকা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
তার আগেও সাকিব বিতর্ক এড়াতে পারেননি। ২০১৯ সালে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে আইসিসি তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। মাঠের বাইরে ব্যবসা ও শেয়ারবাজারে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছিল।
বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাকিব, তার মা ও আরও ১৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে।
একসময় দেশের গর্ব ছিলেন যিনি, সেই সাকিব আল হাসান এখন আলোচনায় অন্য কারণে— রাজনীতি, বিতর্ক ও তদন্তের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে তার একসময়ের উজ্জ্বল ক্রিকেট জীবন।
সূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট


































