পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজতে তরুণ—তরুণীরা সেজে এসেছে মেলায়

Published : ১৮:৫২, ৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা ২০০ বছরের ঐতিহ্য! মেলায় পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজতে তরুণ—তরুণীদের বাড়তি তোড়জোড়! পছন্দ হলেই ধুমধাম করে বিয়ের সুযোগ! তাই তো সৌন্দর্য প্রকাশে কপালে টিপ, ঠেঁাটে লিপস্টিক ও চুলের বেণিতে ফুল গুঁজে মেলায় উপস্থিত হন হাজারো তরুণী।
পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজতে তরুণ-তরুণীদের জন্য বিশেষ আয়োজনে অংশ নেন উত্তরাঞ্চলের ৭ জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কয়েক হাজার আদিবাসী। দিনাজপুরের বীরগঞ্জে আয়োজিত আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলায় উপস্থিত হন এসব আদিবাসী তরুণ-তরুণী।
প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের পরের দিন বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যতিক্রমী এ মেলার আয়োজন করা হয়। অনেকের কাছে এই মেলা বাসিয়াহাটি নামে পরিচিত।
সমতল ভূমির আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ মেলায় প্রতিবছরের ন্যায় গত ৩ অক্টোবর শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। মেলায় বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় অংশ নিতে শুক্রবার বিকাল থেকেই বাহারি সাজে গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও নীলফামারী হতে আসা সাঁওতাল স¤প্রদায়ের হাজারো নারী—পুরুষ উপস্থিত হন গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
এসেছেন অন্য স¤প্রদায়ের মানুষও। শতবর্ষের ঐতিহ্য ধরে চলে আসা মেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আত্মীয়—স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই সুযোগে পছন্দের জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নেওয়ার সুযোগও পায় তারা। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের আলোচনার মাধ্যমে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়।
এই মেলায় অংশ নেওয়া অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। মেলায় আসা আদিবাসী তরুণী এঞ্জিলিনা মার্ডি বলেন, একটা সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল বলে শুনেছি। তবে আধুনিকতার ছেঁায়ায় সব বদলে গেছে। এখন সেই রীতিতে ভাটা পড়ে। সময়ের সঙ্গে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার মান এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
বেশিরভাগ আদিবাসী ছেলে—মেয়ে এখন স্কুলমুখী হয়েছে। কালের বিবর্তনে পুরোনো ঐতিহ্যগুলো অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে। মেলার আয়োজক ও আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আহ্বায়ক জোসেফ হেমরম বলেন, পূর্বপুরুষেরা এই মেলা শুরু করেছে। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি।
তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলা যাবে না। বাপ—দাদার কাছে শুনেছি, আনুমানিক কয়েক শত বছর পূর্ব থেকে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বিয়ের বিষয়টি আগের মতো করে এখন আর হয় না। মেলার আয়োজনে এলাকার সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, মিলনমেলায় গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর লোকের সমাগম ঘটে। মেলায় কাউকে পছন্দ করলে পরে পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে পারে।
বিডি/এএন