শিবগঞ্জে ইউএনও’র বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণাকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা

Published : ২২:০৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বহু বছর ধরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাল্যবিবাহ একটি বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান।
২০১৭ সালে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলাকে প্রথমবারের মতো বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সেসময় জনপ্রিয় শিল্পী, তারকা ও অতিথিদের উপস্থিতিতে স্টেডিয়ামে জমকালো অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সে ঘোষণার বাস্তব কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বরং ঘোষণার পর বাল্যবিবাহ আরও বেড়েছে।
বর্তমানে আবারও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজাহার আলীর নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো শিবগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এসব ঘোষণাই থেকে যাচ্ছে কেবল কাগজে-কলমে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম হয়নি, স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পেইন বা সচেতনতা সভা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কার্যালয় কিংবা গ্রাম পর্যায়েও কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি কিংবা নিকাহ রেজিস্ট্রারদের সম্পৃক্ত করে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি ব্র্যাকের গবেষণা প্রতিবেদন “Born to be a Bride, Child Marriage: Trends and Causes” অনুযায়ী দেশে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয় পিরোজপুর জেলায় (৭২.৬%)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা (৬৫.২%), আর এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাতেই বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নিকাহ রেজিস্টার সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল বারী বলেন, “এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও লোক দেখানো কার্যক্রম ছাড়া কিছু নয়। সরকারি টাকায় আয়োজন হয়, কিন্তু মাঠপর্যায়ে বাস্তবে কোনো কাজ হয় না।”
স্থানীয় সচেতন নাগরিক আব্দুল খালেকের অভিমত, “ঘোষণা মানেই বাস্তবতা নয়। এলাকায় প্রতিনিয়ত বাল্যবিবাহ ঘটছে। ঘোষণার নামে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”
দ্বিতীয় দফার ঘোষণাটি অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে, উপজেলা প্রশাসন ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আয়োজনে। স্লোগান ছিল— “আমার উপজেলা, আমার দায়িত্ব – শিশুর জীবন হোক বাল্যবিবাহমুক্ত।”
তবে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, ঘোষণার মতো আনুষ্ঠানিকতায় সমস্যার সমাধান হবে না। বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
BD/AN