ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতির তাৎপর্য কী

Published : ০০:০২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কাগজে-কলমে পৃথিবীর মানচিত্রে ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্র নেই। তবে বাস্তবে বহু দেশ এই ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্র হিসেবে, এমনকি বিশ্বের নানা প্রান্তে তাদের কূটনৈতিক মিশনও চালু আছে। অলিম্পিকসহ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরেও ফিলিস্তিনিরা অংশ নিয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিনের ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিরোধের কারণে এখনো ফিলিস্তিনের কোনো নির্দিষ্ট রাজধানী, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা কিংবা স্বাধীন সেনাবাহিনী নেই।
পশ্চিম তীর দীর্ঘদিন ইসরাইলি সেনাদের দখলে থাকার পর ১৯৯০-এর দশকে গঠিত হয় ‘প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি’ বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। যদিও তাদের হাতে পুরো ভূখণ্ডের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। অন্যদিকে গাজা এখনো ইসরাইলের আগ্রাসনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্র।
এই অবস্থায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ। নৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে এটি শক্ত অবস্থান হলেও বাস্তবে ফিলিস্তিনিদের জীবনে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনার সুযোগ সীমিত। তবু প্রতীকী এই স্বীকৃতিও ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের মর্যাদা ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষক’। অর্থাৎ, তারা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে, কিন্তু ভোটাধিকার নেই।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের স্বীকৃতির পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চারটির সমর্থন পাবে ফিলিস্তিন। কারণ রাশিয়া ও চীন ১৯৮৮ সালেই স্বীকৃতি দিয়েছিল। এর ফলে ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিসরে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
ওয়াশিংটন অবশ্য ১৯৯০-এর দশকে গঠিত মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেই স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। এরপর বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সমর্থন জানিয়েছে।
এদিকে রোববার যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর পশ্চিম তীরের রামাল্লায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কারও মতে, এটি আশার সঞ্চার করেছে, অন্যরা মনে করছেন এতে বাস্তবে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না।
রামাল্লার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসিব বলেন, “খুব ভালো সংবাদ। আমরা চাই, সব ইউরোপীয় দেশ এ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করুক এবং আমাদের স্বাধীন দেশ স্বীকৃতি পাক। তখন যুদ্ধের অবসান ঘটবে।”
আরেকজন নারী জানান, “অনেক দেরিতে এলো, তবে পুরোপুরি অর্থহীন নয়।”
তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই স্বীকৃতির পর ইসরাইল হয়তো দমন-পীড়ন আরও বাড়াবে। ইতোমধ্যে পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা শুরু করেছে তারা। বেশ কয়েকজন ইসরাইলি মন্ত্রী এমনকি কিছু এলাকা সরাসরি ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করার হুমকিও দিয়েছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতিকে ইসরাইল ‘হামাসের জন্য পুরস্কার’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এটি মূলত যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মুসলিমদের চাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত। ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, “এটি ৭ অক্টোবরের গণহত্যার প্রতি একধরনের সরকারি স্বীকৃতি।”
তবে হামাস এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
প্রসঙ্গত, ইসরাইলি দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরাইল দাবি করে, ওই হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত এবং ২০০-র বেশি লোককে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে, যা আজও অব্যাহত। এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং কয়েক লাখ আহত হয়েছেন। গাজা শহর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি আসে। এখন দৃষ্টি থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে—তাদের অবস্থান কী হয় এবং গাজার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই নির্ধারণ করবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ভবিষ্যৎ রাজনীতি।
BD/AN