রাব্বির বিদেশযাত্রা, মাইক ভাড়া করে গালাগাল করার পর স্বপ্ন পূরণ

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সারোয়ার হোসেন রাব্বির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে—বিদেশে পাড়ি দেওয়ার।

যদিও এক লাখ টাকার অভাবে তার বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, তিনি হতাশায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসীর কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তের ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু ভাগ্য তার দিকে মুখ ফিরিয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সহায়তায় রাব্বি নতুন আশা দেখছেন। ব্যাংকটি তাকে দুই লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যে বিদেশযাত্রার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

রাব্বি হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে বহুদিন ধরে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন।

ভিসা থাকলেও টাকার জোগাড় না হওয়ায় তার যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এনজিওসহ বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের আবেদন করলেও সফল হননি তিনি।

২৩ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে তিনি দুই লাখ টাকার চেক হাতে পান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা পাইছি। আপনারা যদি সাহায্য না করতেন, হয়তো আর এই টাকাটা পেতাম না। ধন্যবাদ সবাইকে।”

রাব্বি জানিয়েছেন, আগামী ৩০ অক্টোবর তিনি সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হবেন। নতুন যাত্রার আগে তিনি সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং আগের ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনার জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন।

গত ১৬ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার টাকা না পেয়ে রাগে ও হতাশায় তিনি ৫০০ টাকায় মাইক ভাড়া করে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে নিজের কষ্ট ভাগ করে নিয়েছিলেন।

ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ হিসেবে প্রকাশ পায়। এরপর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের নজরে আসে রাব্বির পরিস্থিতি।

রাব্বি বলেন, “ভিসা থাকলেও টাকার অভাবে যেতে পারছিলাম না। রাগ ও হতাশায় যা বলেছি, তা আসলে কষ্ট থেকে বলা। সংবাদ প্রকাশ না হলে হয়তো আজও আমি দেশে বসে কাঁদতাম।

প্রতিবেদনের পর ব্যাংক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, কাগজপত্র যাচাইয়ের পর আমাকে দুই লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে। এখন টিকিট হাতে, ইনশাআল্লাহ ৩০ অক্টোবর সৌদি আরব যাচ্ছি।”

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার জেনারেল ম্যানেজার মোজাম্মেল হক জানান, সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি তাদের নজরে আসে। যাচাই-বাছাই শেষে রাব্বিকে দুই লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়।

দুই মাস পর থেকে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ শুরু করবেন। বিদেশগামী কোনো শ্রমিক আর্থিক সমস্যায় পড়লে ব্যাংক সব সময় তার পাশে থাকবে এবং যে কোনো সময় সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা যাবে।