রংপুর অঞ্চলে মহিষ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে
Published : ১৩:৪১, ৮ নভেম্বর ২০২৫
এক সময় উত্তরাঞ্চলের কৃষিজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল মহিষ। হালচাষ, পণ্য পরিবহন কিংবা দুধের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতিতে ছিল অপরিসীম গুরুত্ব।
শুধু তাই নয়, মইশালকে কাছে রাখার জন্য নারীর আবেগময় উত্তরাঞ্চলে ভাওয়াইয়া গান-ধিকো ধিকো আরে ও মইশাল ধিকো তোমার হিয়া, কোন পরাণে যাইবেন মইশাল আমাকো ছাড়িয়ে.........আর কতকাল রাখিবো যৌবন শাড়ীর আঞ্চলে বাঁধিয়ে মইশাল রে.....।
কিন্তু কালের পরিবর্তনে সেই মহিষ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিকল্প পরিবহণ ব্যবস্থা, উন্নত চাষাবাদ, প্রতিকূল পরিবেশ, খাদ্য সংকট ও কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা না থাকা, অন্যান্য গবাদি পশুর চেয়ে দাম বেশি এ সব কারণে মহিষের বংশ বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
৩০ বছর আগে রংপুর বিভাগে মহিষের সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। এখন তা কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার ৩৪৮টিতে। রংপুর প্রাণিস¤পদ অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ অঞ্চলে ১ কোটি ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৯০৪ টি গবাদী পশু রয়েছে।
এর মধ্যে গরু ৩৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৫৭টি, ছাগল ৫৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৭২০টি, ভেড়া ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮৭৯টি, মহিষ ৩৫ হাজার ৩৪৮টি এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৪১ হাজার ৩০৪টি। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি মহিষ রয়েছে পঞ্চগড় ও গাইবান্ধা জেলায়।
অথচ তিন দশক আগে এ অঞ্চলে মহিষের সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। তথ্য মতে রংপুরে ২ হাজার ২৭৯টি, গাইবান্ধায় ৭ হাজার ২০৮টি, কুড়িগ্রামে ৫ হাজার ৫৪৩টি, লালমনিরহাটে ২ হাজার ৬০৮টি, নীলফামারীতে ২ হাজার ৬২৫টি, দিনাজপুরে ৪ হাজার ২৭টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ হাজার ২৮টি এবং পঞ্চগড়ে ৭ হাজার ৩০টি মহিষ রয়েছে। মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সর্বত্রই এখন মহিষের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা চলছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে ৩০ বছর আগে রংপুর বিভাগে মহিষের সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। এখন তা কমে এসে মাত্র দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৩৪৮টিতে। রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, রংপুর অঞ্চলে মহিষ কমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি আবিস্কারের ফলে কেউ এখন মহিষ দিয়ে হাল চাষ করেন না।
এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটেছে উন্নতি। গরু-মহিষের পরিবর্তে এখন ব্যবহার হচ্ছে যান্ত্রিকবাহন। ফলে গরু-মহিসের গাড়ির প্রচলন প্রায় উঠে যেতে বসেছে। অন্যান্য গবাদি পশুর তুলনায় মহিষের খাবার অনেক বেশি লাগে। গৃহস্থরা মহিষ পালন করলে খাবারের যোগান ঠিক মত দিতে পারেন না। এছাড়াও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
পরিবেশগত কারণের মহিষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এলাকায় কৃত্রিম মহিষ প্রজলন কেন্দ্র না থাকায়ও মহিষের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলে কেউ কেউ এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে মহিষের ব্যবহার করছেন। জানা যায়, দেশের একমাত্র মহিষ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় অবস্থিত।
এছাড়া দেশের একমাত্র সরকারি মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায় রয়েছে। মহিষের বংশবিস্তারের লক্ষ্যে প্রাণিস¤পদ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় দেশে দ্বিতীয় কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
বিডি/এএন


































